শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকার ধানমণ্ডিস্থ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলনের রাজনৈতিক কার্যকারিতা : চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ বিষয়ক দিনব্যাপী বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) ও দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশের সপক্ষ ৫২টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপত্বিতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাপা’র নির্বাহী সহ সভাপতি ডা. মো.আব্দুল মতিন। বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাপা সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. নজরুল ইসলাম।
সমাপনী অধিবেশনে বাপা’র সহ-সভাপতি রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ উপচার্য মোহাম্মদ আলী নকি।
সুলতানা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ নিয়ে অনেকে ভাল ভাল কথা বলেন, আমরা আশা করব এগুলো যেন শুধু তার মুখের কথা না হয়, পরিবেশ রক্ষায় তিনি যেন বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসডিজিতেও উল্লেখ রয়েছে পরিবেশ বিনষ্ট হয় এরকম কোন উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন কোন কাজেই সফল হয় না যদি সিনসিয়ারিটি অব পার্পাস, অনেস্টি অব পার্পাস না থাকে। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী তার কাজে কর্মে বাবার নির্দেশিত পথেই হাঁটবেন।
ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন,পরিবেশ রক্ষায় অনেক রাজ‣নতিক দুর্বলতা রয়েছে তা নিরসনে পরিবেশ বিধ্বংসী যেসব কার্যকলাপ চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজ‣নতিক মহলকে সক্রিয়ভাবে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।
ড. মো. নজরুল ইসলাম তার প্রবন্ধে বলেন, রাজ‣নতিক দলগুলোকে প্রভাবিত করতে না পারলে পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। পরিবেশ আন্দোলনকে ক্রমান্বয়ে গণ আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন,পরিবেশ আন্দোলন একটি বৈশ্বিক ইস্যু। আমাদের এই বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি থেকে পরিবেশ ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে এবং সামগ্রিকভাবে পরিবেশ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আামদের গ্যাস সংকটের কথা বলে দেশে পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে আবার সরকার গ্যাস রপ্তানীর বিধান রেখে নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে যদি সরকারে দায়বদ্ধতা থাকে তবে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের বায়ু, সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ এর চাহিদাপূণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জনগণের মধ্যে প্রচ-ভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে স্বার্থগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হোন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ার্যামান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে নদীগুলো রক্ষা করতে হবে এবং নদী দখল, দূষণ, আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষার জন্য নদী রক্ষা কমিশনকে ক্ষমতাশালী করতে হবে।
সম্মিলিত অধিবেশনে শরীফ জামিল বাপা’র আন্দোলন ও রাজ‣নতিক প্রতিবন্ধকতা- চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার বিষয়ে একটি বিশেষ উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সবাইকে পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতার চর্চা করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় রাজনীতিবিদদের একটি কার্যকরি ভূমিকা রয়েছে। তাই পরিবেশবাদীদের উচিত হবে রাজনীতিবিদদের সাথে সমন্বয় করা। রাজ‣নতিক সংলিষ্টতা বা সমন্বয় ছাড়া পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, শুধু সমস্যা চিহ্নিত করলেই হবে না পাশাপাশি সমাধানের পথটি দেখিয়ে দিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের রাজ‣নতিক অঙ্গিকার রয়েছে। সরকার সেই পলিসি অনুযায়ী কাজ করছে এবং পলিসিতে কোন ঘাটতি থাকলে সরকারের সাথে সেটি সমন্বয় করতে হবে। পরিবেশ নিয়ে যেসব আইন ও পলিসি রয়েছে সেগুলো কার্যকর করতে পারলেই পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
সমান্তরাল অধিবেশনে কারিগরি ও সাধারণ বিভাগে ৪৮ টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা