ফজলুল বারী : আমেরিকা-ইরান যুদ্ধ হবেনা এমন একটি ধারনার কথা লিখেছিলাম। কিন্তু যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বশেষ টুইট আবারও যুদ্ধের উস্কানি সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন শান্তকামী মানুষজন যুদ্ধ চাননা। যুদ্ধ তাদের জীবনটা কতোটা কঠিন এবং ব্যয়বহুল করে তা তারা জানেন। কিন্তু দেশটির বর্তমান বেপরোয়া স্বভাবের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন টুইট করে ফের যুদ্ধে ডাকলেন ইরানকে! ইরানি জেনারেল কাসিম সোলাইমানিকে হত্যার মাধ্যমে এই যুদ্ধের উস্কানি সৃষ্টি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে করে এরমাঝে তেলের দাম সোনার দাম বেড়েছে, শেয়ার মার্কেটে ধাক্কা লেগেছে এই যুদ্ধের উস্কানিতে। ইরানের জানি দুশমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হলো তারা পরিস্থিতিতে ভয় পেয়েছে। কারন যুদ্ধ লাগলে ব্যবসা বানিজ্য লাটে উঠবে এই দুই দেশের। সৌদি আরবের অর্থনীতির অবস্থা এমনিতে ভালোনা। যুদ্ধ লাগলে কি ঘটে তা জানে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কাসিম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেবার ঘোষনা দিয়েছে ইরান। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন ইরান যদি প্রতিশোধ নেয় তাহলে দেশটির ৫২ টি স্থাপনায় হামলা করা হবে। যুদ্ধ হোক কেউ চাননা। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন এখন আরেকটি যুদ্ধের বোঝা বহনের ক্ষমতা বিশ্বের নেই। কাসিম সোলাইমানি হত্যা শুধু ইরান নয়, ইরাকের জনমতকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। সুন্নি সাদ্দামকে সরিয়ে ইরাকে শিয়া শাসনের বুৎপত্তি করেছিল আমেরিকা। এটা যে খাল কেটে কুমির আনা হয়েছিল সেটি এখন বুঝতে শুরু করেছে পেন্টাগন। সোলাইমানির মৃতদেহের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গোটা ইরাক। ইরাকিরাও আবার আমেরিকার পতাকা পোড়াচ্ছে! আরব শাসক চুপ। শুধু ওমান সোলাইমানি হত্যায় ইরানি জনগনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। আরব জাহানের অবস্থা এমন এর জনগনের সিংহভাগ এন্টি আমেরিকান, শাসকরা প্রো আমেরিকান। কারন ২০টি আরব দেশের বেশিরভাগ গণতন্ত্রহীন। আমেরিকার বিরুদ্ধে গেলে গণতন্ত্রের আরব বসন্ত শুরু করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
গত দু’দিন ইরাক-ইরানের গণমাধ্যম সমূহ অনুসরন করতে গিয়ে যা বুঝেছি তাহলো সোলাইমানি হত্যাকান্ড ইরাক-ইরানের জনতার ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে। ইরানি শাসকদের পছন্দ করেননা এমন লোকজনও ক্ষিপ্ত হয়েছেন আমেরিকার ভূমিকায়। কাশ্মীরেও মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বাগদাদে সোলাইমানির জানাজায় লাখ লাখ লোক জমায়েত হন। এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ইরানে। কিন্তু মার্কিনীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইরাকের লোকজন। রবিবার কারবালা, মসুল, সামারা, তিরকিত সহ ইরাকের প্রধান শহরগুলোয় মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভ করেছে লাখ লাখ মানুষ। এসব মিছিলে লাল পতাকা ওড়ানো হয়। যুদ্ধের প্রতীক লাল পতাকা। বাগদাদের নানা অংশে থেমে থেমে বিস্ফোরনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মার্কিন দূতাবাস এবং মার্কিন সৈন্যরা যে এলাকায় থাকেন সে এলাকায় রকেট নিক্ষেপ করা হয়। এরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট করে হুমকি দিয়ে বলেন তারা একযোগে ইরানের ৫২ স্থানে হামলা চালাতে পারেন। ট্রাম্পের টুইট সৃষ্টি করেছে ঘৃতাহুতির। ভীতসন্ত্রস্ত সৌদি-আরব আমিরাত নেতৃবৃন্দ ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা নিতে বলেছেন। কিন্তু এদের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিবৃত্ত হতে বলার সাহস নেই।
ইরাক যুদ্ধের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসকরা অভিনব এক পথ নেয়। ইরাকে যাই চলুক আরব আমিরাত নিরাপদ এটি প্রমান করতে দুবাই-শারজায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়। শুধু ম্যাচ আয়োজন নয়, ম্যাচগুলোর প্রচারের জন্যে ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান-শ্রীলংকা থেকে সাংবাদিক নিয়ে যাওয়া আমিরাত সরকারের উদ্যোগে। কিন্তু এবারে যুদ্ধের দামামা দেখে সৌদি-আমিরাত সরকার উদ্বেগে পড়ার পর যুদ্ধ লাগলে এর পরিনাম হতে পারে ভয়াবহ। কারন এই যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে ইসরাইলও। এই যুদ্ধ শুধু ইরাক-ইরান নয়, ফিলিস্তিন-সিরিয়া-লেবানন পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। আরব অঞ্চল উত্তপ্ত হলে তা তেলের দামে প্রভাব ফেলবে। এর প্রভাব শুধু ইউরোপ আমেরিকা না, বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছবে। বাংলাদেশের আরও বিপদ হবে শ্রমবাজারে। যুদ্ধ দেখলেই বাংলাদেশিরা দেশের বিমান ধরতে লাইন দেন। এদের অনেকে আর বিদেশের কর্মস্থলে ফেরত যাননা অথবা যেতে পারেননা।
সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা এক অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা। পরিস্থিতি এমন যেন ইরানকে যুদ্ধে জড়াতে চাইছেন ট্রাম্প। এই যুদ্ধ ইরানের এড়িয়ে চলা কঠিন। বাস্তব বলছে যুদ্ধ লাগলে ইরাকও উত্তাল হয়ে উঠবে। কারন এই যুদ্ধের অংশ হবে ইসরাইলও। যুদ্ধে ইরাকের জনগন জড়ালে তা মার্কিন স্বার্থের জন্যে স্পর্শকাতর হয়ে উঠবে। কারন মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সেনা উপস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ স্পট এই ইরাক। শাতিল আরব, সুয়েজ অঞ্চল উত্তাল হবে। সোলাইমানি হত্যাকান্ড বিশ্বজুড়ে ইরানের প্রতি যে সহানুভূতির সৃষ্টি করেছে এটিই মার্কিন প্রশাসনের জন্যে বিব্রতকর। কারন জাতিসংঘ স্বাধীন হলে এই ইস্যুতেই আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের প্রস্তাব আসতো। আমেরিকার সৃষ্টি করা যুদ্ধে এখানেই এখন ইরান এগিয়ে। ইরানি তথা শিয়াদের মধ্যে শহীদি জোশ বেশি। ইরানের নেতৃত্ব এটি কিভাবে নিয়ন্ত্রন করে সেটিই দেখার বিষয়। কারন যুদ্ধে জড়ালে ইরান ধংস হয়ে যাবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা