করোনাভাইরাসে নিয়ে জনমনে আতঙ্ক যত বাড়ছে, সেই সাথে ছড়িয়ে পড়েছে পরিত্রাণের নানা ফর্মুলা।
ফেসবুকের মত সামাজিক গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই প্রতিদিন এমন হাজারো পরামর্শ তত্ত্ব চোখে পড়বে যেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন কিছু ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করেছে।
গরম আবহাওয়াতেও ছড়াতে পারে কোভিড-১৯
এটা ঠিক যে অনেক সংক্রামক রোগ- বিশেষ করে ফ্লু, শীতের মাসগুলোতেই বেশি হয়। ডিসেম্বরে প্রথম যখন চীনের করোনাভাইরাস ছড়ায় তখন সেখানে বেশ ঠাণ্ডা ছিল। পরবর্তীতে যেসব দেশে এই ভাইরাস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে, সেগুলোর অনেকগুলোই শীতপ্রধান। ফলে, একটি সাধারণ ধারণা তৈরি হয়েছে যে গরম পড়লেই এই ভাইরাস মরে যাবে। কিছু কিছু গবেষণাতেও দেখা, গরম আবহাওয়াতে নতুন এই করোনাভাইরাসের স্থায়িত্ব অপেক্ষাকৃত কম।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা এখনও সম্ভব নয় যে, গরম- স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এই ভাইরাস বাঁচেনা । বরঞ্চ এখন পর্যন্ত যেসব প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে রয়েছে, তাতে যে কোনো জায়গায়, যে কোনো আবহাওয়াতেই কোভিড-১৯ ভাইরাস বিস্তারের ক্ষমতা রাখে।
সুতরাং, ডব্লিইএইচও বলছে, গরম পড়লেও আপনার উচিৎ হবে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা। মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, বারবার হাত ধুতে হবে, এবং চোখ,মুখ বা কান স্পর্শ করবেন না।
বরফে ঢাকা পড়ে যাবে ভাইরাস শীতের দেশের বহু মানুষ মনে করছেন, ভারী বরফ পড়লে হয়তো করোনাভাইরাস টিকবে না। ভুল। বাইরের তাপমাত্রা যত বেশিই থাকুক না কেন আপনার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুতরাং বিভ্রান্তিতে না ভুগে, সাবধানতা অবলম্বন করুন।
গরম পানিতে গোসল কি বাঁচার উপায় শুধু গরম পানিতে গোসল করলেই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়। বরঞ্চ বেশি গরম পানিতে গোসল করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গরম পানিতে গোসল নয়, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আপনি ভাইরাস ঠেকাতে পারেন।
রসুন খেলে কি সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে? সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে এই ভাইরাস ঠেকাতে রসুন খাওয়ার বহু পরামর্শ চোখে পড়েছে। কিন্তু ডব্লিউএইচও বলছে, এই ধারণা ঠিক নয়। রসুন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার যার ভেতর জীবাণুনাশক কিছু উপাদান হয়তো রয়েছে। কিন্তু, নতুন এই করোনাভাইরাস ঠেকাতে রসুন কাজ করবে- এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আদৌ নেই।
কমবয়সীরা কি নিরাপদ, করোনাভাইরাস কি শুধু বয়স্কদেরই হামলা করে? যে কোনো বয়সের লোকই নতুন এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এটা ঠিক যে, বেশি বয়স্ক লোক এবং যারা অ্যাজমা, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের মত রোগে ভুগছেন, তাদের ওপর এই ভাইরাসের প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, কিন্তু অল্পবয়সীরাও এই ভাইরাসে সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।
মশার কামড়ে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে? এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে নেই যে মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে। নতুন এই করোনাভাইরাস শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে, এবং আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি, থুতুর মাধ্যমেই তা অন্যের শরীরে ঢোকে। সুতরাং কারো ভেতর এসব উপসর্গ দেখলে দূরে থাকুন।
শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কি বাঁচা যাবে এক কথায় উত্তর – না। শরীরে যদি একবার ভাইরাস ঢুকে যায়, তাহলে শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কোনো লাভ নেই। বরঞ্চ তাতে চোখ বা মুখের ক্ষতি হতে পারে।
নিউমোনিয়ার টিকা কি কোভিড-১৯ ঠেকাবে? এখন যে যে ধরণের নিউমোনিয়ার টিকা বাজারে রয়েছে, সেগুলো নতুন এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করেনা। করোনাভাইরাসের জন্য সম্পূর্ণ নতুন টিকা তৈরির কাজ চলছে।
লবণ-পানি দিয়ে নাক ধুলে কি কাজ হবে? না। লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে নিয়মিত নাক ধুয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়- এমন কোনো প্রমাণ এখনো নেই।
আ্যন্টিবায়েটিক দিয়ে করোনাভাইরাস ঠেকানো বা চিকিৎসা করা যাবে? না, অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ভাইরাসের ক্ষেত্রেই কাজ করেনা। করোনাভাইরাস একটি ভাইরাস এবং এটা ঠেকাতে বা এর চিকিৎসায় কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ঠিক নয়।
তবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে যদি আপনি কোনো ব্যাকটেরিয়াতেও আক্রান্ত হন, তাহলে আপনাকে হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।
করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ আছে? এখন পর্যন্ত নতুন এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বা এর চিকিৎসায় কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যে সব শারীরিক উপসর্গ দেখা দেবে, সে সসব উপসর্গ – যেমন শ্বাসকষ্ট- প্রশমনে রোগীকে সাহায্য করতে হবে। এখন পর্যন্ত সেটাই এর চিকিৎসা।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা