পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দেড় লাখ মানুষের। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে চার হাজার মানুষ। আহতের সংখ্যা হয় দুই থেকে পাঁচ কোটি। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ভারতের ৩০ শতাংশ ড্রাইভিং লাইসেন্সই ভুয়া। দায় স্বীকার করেছেন মন্ত্রী নিজেই। সংসদে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আমার ব্যর্থতা হলো, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি।
সরকার মনে করছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বর্তমান ট্রাফিক নিয়মে বেশকিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাতে দুর্ঘটনার মাত্রা কমবে বলেও মনে করছে বিজেপি সরকার। পরিবেশ দূষণ রোধ এবং আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাও সরকারের লক্ষ্য। তাই ১৯৮৮ এর আইন পরিবর্তন করতে মোটরযান (সংশোধনী) বিল, ২০১৯ সংসদে তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতের নিয়ম অনুযায়ী লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর বিলটি পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে। তার ছাড়পত্র পেলেই আইনে সংশোধনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
বিলটির বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, পরিবহনের পুরো বিষয়টিই রাজ্য সরকারের অধীনে রয়েছে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স ইত্যাদি বিষয়েও যদি কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করে, তাহলে রাজ্যগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই কেন্দ্র-রাজ্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত।
তবে নীতিন গাডকারির চিন্তাটা ভিন্ন। সংসদে তিনি বলেন, গোটা বিশ্বে ভারতই একমাত্র দেশ, যেখানে অতি সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলে। এর ফলে প্রতিবছরই দেড় লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। এ জন্য সড়ক পরিবহনে আমূল পরিবর্তন এনে ভারতে ‘লন্ডন পরিবহন মডেল’ চালু করা হবে।
বিরোধীরা বলছেন, মোটরযান কঠোর হচ্ছে হোক। সেইসঙ্গে বেহাল সড়কের মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিক সরকার।
তৃণমূল এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দুষছেন শাসক দল বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিতে চাই। এমন সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। কেন্দ্রীয় সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সবকটি দলের উচিত তাকে সাধুবাদ জানানো। দুর্ঘটনা কমাতে সরকার যখন উদ্যোগী, তখন রাজনৈতিক স্বার্থে তার বিরোধিতা করছে তৃণমূল।
বর্তমান আইনে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে দেরি হলে জরিমানা এক শ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে। মোটরযান আইনে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের জরিমানার পরিমাণ ১০ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। হেলমেটবিহীন চালকের জরিমানা একশো থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকার করার ইচ্ছে সরকারের। গতিসীমা ছাড়ালে জরিমানা ছিল পাঁচ শ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে জরিমানা দুই হাজার টাকা। এবার তা ১০ হাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনো নাবালক চালক ট্রাফিক আইন অমান্য করলে তার দায় নিতে হবে অভিভাবককে অথবা গাড়িক মালিককে। বাতিল করা হতে পারে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ২০ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করারও সুপারিশ করছে সরকার। ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হবে পাঁচ বছরের জন্য। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে তিন মাসের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে।
এর আগে ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করতে চেয়েছিল ভারত সরকার। ২০১৭ সালের এপ্রিলে লোকসভায় পাশও হয়। কিন্তু দেশজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকে একাধিক সংগঠন। তার জের ধরে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হলেও পাস হয়নি। এরমধ্যে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই আবার নতুন করে বিলটি এনেছে সরকার।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
NB:This post is copied from kalerkantho