গতকাল সরেজমিন আগানগর ও কালিগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, মেড ইন জিনজিরা খ্যাত খাঁটি বিদেশি পণ্য কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা এদিক-ওদিক চক্কর দিচ্ছেন। সদরঘাটের কাছেই সেতু থাকা সত্ত্বেও ইদানীং শত শত মানুষের ছোট ছোট কাঠের নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার দৃশ্য দেখে যে কেউই বিভ্রান্ত হতে পারেন। নৌকা দিয়ে নদী পার হওয়াদের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কাপড় ব্যবসায়ী। তারা পোশাকের কেন্দ্রস্থল কেরানীগঞ্জে পৌঁছার জন্য সদরঘাটের নৌ টার্মিনালকে শর্টকাট হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট, শার্ট, আন্ডারগার্মেন্ট ও শিশুদের পোশাক কিনতে এসেছেন। এমনকি গরমের পোশাকও তৈরি হয় এই পোশাকপল্লীতে। দেশের স্থানীয় বাজারগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে এই পোশাকপল্লী। বর্তমানে কেরানীগঞ্জের ১৩ মার্কেটে ২২ হাজার পোশাক কারখানা ও ১৮ হাজার শোরুম রয়েছে। এসব কারখানা ও শোরুম মালিকদের লক্ষ্য- প্রতি বছর শুধু রমজান মাসেই তারা অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি করবেন। বর্তমানে এসব পোশাক কারখানা ও শোরুমে প্রায় ২ লাখ লোক কাজ করছেন। তবে ভারত ও চীনের পোশাকের নমুনা নিয়ে এখানে পোশাক তৈরি হওয়ায় আমাদের পোশাকের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া স্থানীয় মার্কেটের পাশাপাশি ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও এখানে তৈরি পোশাকের জন্য কাপড় আসে। এখানকার পাইকারি বাজারে একটি শার্ট ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, পাঞ্জাবি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়, থ্রিপিস ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকায় এবং শিশুদের পোশাক ১৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। জেলা পরিষদ মার্কেটের ফাতেমা বোরকা হাউসের মালিক আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার দোকানে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দামের বোরকা রয়েছে। এসব বোরকা রাজধানীর অভিজাত এলাকার শপিং মলে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিদেশি বলে বিক্রি করা হয়।’ জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জভিত্তিক গার্মেন্টস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পণ্যের মান ভালো, দামও কম। তাই বুড়িগঙ্গার তীরের এ জায়গায় পোশাকপল্লীর প্রসার ঘটছে। কেরানীগঞ্জে সারা বছর যে পোশাক বিক্রি হয় পবিত্র শবেবরাত থেকে ১৫ রোজার মধ্যে তার প্রায় ৭৫ শতাংশ বিক্রি হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে সারা দেশ থেকে দিনে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যবসায়ী কেরানীগঞ্জে আসেন পোশাক কিনতে। অথচ বছরের অন্যান্য সময় এখানে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে। প্রধানত জিন্স পোশাকের পাইকারি বাজারের জন্য কেরানীগঞ্জ এখন একটি জনপ্রিয় নাম। যতই দিন যাচ্ছে ততই এখানে বাড়ছে ক্রেতার ভিড়।’ কুমিল্লার শাসনগাছার নিউ লাকি ফ্যাশনের মালিক মোস্তাফিজুর রহমানও মিজানুর রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বললেন, ‘প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার এখানে আসি। দেশের অন্যান্য পাইকারি বাজারের চেয়ে এখানে বিদেশি জিন্সের পোশাক অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কমে পাওয়া যায়। নকল বিদেশি এসব জিন্স প্যান্ট বিক্রি করা যায় অতি সহজে।’ পাবনার বেড়া উপজেলার ম ল গার্মেন্টসের একটি অংশের মালিক ইসমাইল ম ল বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে তৈরি পোশাকের মান চমৎকার। সেজন্যই ক্রেতারা এই বাজারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দোকানে পণ্যের বিক্রির পরিমাণ গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি।’ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জিতু গার্মেন্টসের মালিক শেখ জান-এ আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের পোশাক প্রস্তুতকারকরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য পোশাক তৈরি করেন।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশের নামিদামি মার্কেটগুলোয় আমাদের এই পোশাক বিক্রি হয়। আমরা প্রতিটি ব্র্যান্ডের জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় এবং বেশি ভালোমানের জিন্স ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করি। একই পোশাক রাজধানীর নামজাদা সুপার মার্কেটে দ্বিগুণ এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন গুণ দামেও বিক্রি হয়।’ শামসুল আলম নামে এক পোশাক কারখানার মালিক বলেন, ‘এবারের ঈদুল আজহায় আমাদের এক থেকে সোয়া লাখ পিস জিন্স তৈরির টার্গেট থাকলেও বিক্রি কমে যাওয়ায় আমরা ৯০ হাজার পিস তৈরি করেছি। এ ছাড়া আমাদের শোরুমের ভাড়াও দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ছোট্ট একটি শোরুমের জন্য মাসে ভাড়া দিতে হয় ৩৬ হাজার টাকা। ২৫ বছর ধরে আমি এই ব্যবসয় আছি। যে হারে ভাড়া বাড়ছে তাতে আমরা এই ব্যবসা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ অন্য পোশাক কারখানার মালিক রহমত আলীর অভিযোগ, বিখ্যাত বিদেশি ব্র্যান্ডের জিন্সের প্যান্টের নকল মাল তৈরি করছে কয়েকটি কারখানা। এদের এমনই ওস্তাদি যে কারও বোঝার উপায় নেই- এগুলো দুই নম্বরি প্রডাক্ট। আসল ভেবে বেশি দামে মানুষ কিনছে আর ঠকছে। NB:This post is collected from bd-pratidin.com