মাশরাফি এবং অধিনায়ক নামটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার অধিনায়কত্বে বদলে গেছে বাংলাদেশের রঙিন পোষাকের ক্রিকেট।
অধিনায়ক হিসেবে সুদীর্ঘ এক যাত্রা মাশরাফি বিন মর্তুজার। সে যাত্রায় তিনি দৃশ্যমান রাজা হলেও অদৃশ্যে অনেক সময়ই তার মাথায় মুকুট শোভা পায়নি। বরং রাজা হয়েও কখনো কখনো আজ্ঞাবহ প্রজার ভূমিকাই পালন করে যেতে হয়েছে তাকে।
গত বৃহষ্পতিবার অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিনে তার অনেক কথাতেই পরাধীনতার সেই শেকলটাও কিছুটা প্রকাশ্য করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুক্রবারের (মার্চ ৬) শেষ ওয়ানডে দিয়ে অধিনায়কত্বের দীর্ঘ যাত্রার সমাপ্তি টানলেও আরো কিছুদিন খেলোয়াড় হিসেবেই চালিয়ে যেতে চান তিনি।
দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমি প্রফেশনালি সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। আমি আশা করবো যারা (বোর্ড) নেক্সট ক্যাপটেনকে নিয়ে ভাববে তারা যেন যে প্রফেশনালিজম নিয়ে আলোচনা করেছে সেটা ধরে রাখে। এটলিস্ট, ভালো খেলুক, খারাপ খেলুক তাকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে, তারপর যেন ২০২৩ চিন্তা করে।’
অধিনায়ক মাশরাফির বিদায় সতীর্থদের পাশাপাশি আবেগপ্লুত করেছে বিদেশি ক্রিকেটারদেরও। বিদায়ী অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে নায়ক আখ্যা দিয়ে এক টুইটবার্তা দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা।
তাকে নিয়ে আবেগী পোস্ট দিয়েছেন শ্রীলংকার সাবেক ক্যাপ্টেন উপুল থারাঙ্গা। থারাঙ্গা লেখেন, তোমার জন্য সর্বাত্মক শুভকামনা রইল বন্ধু মাশরাফি বিন মুর্তজা। কী অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন তুমি। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছ তুমি। শিগগির তোমার সঙ্গে দেখা হবে সতীর্থ কাম বন্ধু।
মাশরাফির বিদায়ে আবেগাপ্লুত ছিলেন সাকিবও। তাইতো তার বিদায়ে নিজের ফেসবুক টাইম লাইনে ম্যাশকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও শুভাকামনা জানিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, আমার ভাই, আমার বন্ধু এবং আমার ক্যাপ্টেন। আপনার অধিনায়কত্বে খেলতে আমি সবসময় স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করেছি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া পোস্টে রিয়াদ আরও লেখেন, ‘আপনার সঙ্গে মাঠে এবং মাঠের বাইরে আমার যে বন্ধন ছিল সত্যিই স্পেশাল। আপনাকে অভিনন্দন, আমার পথ চলায় গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনের জন্য। আপনি আমার অধিনায়ক। আপনার প্রতি আমার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা আছে ও থাকবে’।
এদিকে গতকাল রোববার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ২০২০ সালের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ১৬ টাইগারের নাম ঘোষণা করেছে। নতুন চুক্তিতে ৫ জন নতুন টাইগারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিপরীতে আগের তালিকা থেকে মাশরাফি-সাকিবসহ বাদ পড়েছেন সাতজন।
অবশ্য মাশরাফি এর আগে নিজেই বোর্ডের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন তাকে বাদ দিয়ে নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে দলনায়কের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বদলে যায় টাইগারদের চিত্র। তার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের (২০১৫) কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। প্রথমবার খেলেন আইসিসির দ্বিতীয় বিগ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির (২০১৭) সেমিফাইনালে।
নড়াইল এক্সপ্রেসের অধীনে ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতকে ওয়ানডে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো জেতে বহুজাতিক টুর্নামেন্ট শিরোপা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। দেশের ৮৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ৪৯টি ম্যাচে জয় এনে দিয়েছেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে জয়ের ফিফটি গড়েছেন জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে।
এদেশের কোটি হৃদয় কখনো ভুলতে পারবে না তার নেতৃত্বগুণ। যেমন তার সতীর্থরা পারবেন না প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’কে মিস না করে থাকতে।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা