অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন মানুষের সংস্পর্শে এসে থাকলে সতর্ক করে দিতে পারবে এমন এক প্রযুক্তি তৈরির জন্য যৌথভাবে কাজ করছে অ্যাপল এবং গুগল ।
প্রাথমিকভাবে যেসব থার্ড পার্টি কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ এই মূহুর্তে আছে, সেগুলো যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেই ব্যবস্থা করে দেবে অ্যাপল এবং গুগল ।
কিন্তু তাদের আসল লক্ষ্য এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করা যাতে কোন অ্যাপ ডাউনলোডের দরকারই হবে না।
অ্যাপল এবং গুগলের মনে করে, প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে যাদের উদ্বেগ আছে, তাদের এই কৌশল সেই সমস্যার সমাধান করবে। কারণ যারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন তাদের নাম-পরিচয়ের কোন উল্লেখ কোথাও থাকবে না।
মূলত স্মার্টফোনের ব্লু-টুথ সিগন্যাল ব্যবহার করে জানা যাবে কোন করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের কাছে কেউ গিয়েছিল কিনা এবং যথেষ্ট দীর্ঘ সময় সেখানে ছিল কিনা যার ফলে তারও সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।
পরে যদি পরীক্ষায় দেখা যায় যে কোন মানুষের কোভিড-নাইনটিন হয়েছে, তখন তার কাছাকাছি আসা অন্য মানুষদের স্মার্টফোনে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে সেটি জানিয়ে দেয়া হবে।
তবে স্মার্টফোনে কোন জিপিএস লোকেশন ডাটা বা ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করা হবে না।
কিভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করবে
ধরা যাক, জেনিফার এবং জনের দেখা হলো একটা পার্কে। তারা একে অপরকে চেনে না। দশ মিনিট তারা কথা-বার্তা বললো।
যেহেতু তারা কিছুটা সময় কাছাকাছি ছিল, তাদের দুজনের স্মার্টফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একটি ‘কী কোড’ বিনিময় করলো।
কয়েকদিন পর দেখা গেল, জনের কোভিড-নাইনটিন টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে। জন তখন তার স্মার্টফোনের একটি অ্যাপে তা রিপোর্ট করলো। জনের সম্মতি নিয়ে স্মার্টফোন তখন এই তথ্যটি জানিয়ে দিল একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজে।
জেনিফারের স্মার্টফোন সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংযুক্ত হয়ে দেখলো সম্প্রতি তার সঙ্গে দেখা হয়েছে এমন এক লোকের কোভিড-নাইনটিন ধরা পড়েছে। তখন জেনিফারের স্মার্টফোনে একটি বার্তা এলো তাকে সতর্ক করে দিয়ে।
‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হবে না’
অ্যাপল এবং গুগল এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের এই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টায় ব্যবহারকারীদের “ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, স্বচ্ছতা এবং সম্মতি”কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এই খাতের অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলে তারা এই প্রযুক্তি তৈরি করার আশা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এই নতুন উদ্যোগটি বিবেচনার জন্য তার প্রশাসনের কিছু সময় দরকার।
হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা বেশ আগ্রহী হওয়ার মতো একটা বিষয়, কিন্তু বহু মানুষের উদ্বেগ আছ ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার নিয়ে।”
করোনা ভ্যাকসিনের জন্য ১০০টি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: বিল গেটস
“আমাদের এই ব্যাপারটা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং তারপর আমরা এ বিষয়ে আপনাদের শীঘ্রই জানাবো।” এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডাটা প্রোটেকশন সুপারভাইজার এক বিবৃতিতে বলেন, “এই উদ্যোগটির ব্যাপারে আরও পর্যালোচনার দরকার হবে।
তবে প্রাথমকিভাবে মনে হচ্ছে এরকম একটি প্রযুক্তিতে যা যা থাকা দরকার, এটিতে তা আছে। যেমন ব্যবহারকারীর অধিকার, ডাটা প্রোটেকশন এবং পুরো ইউরোপজুড়ে যাতে এটি কাজ করতে পারে, সেই বিষয়টি।
তবে অনেকে বলছেন, এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে যথেষ্ট মানুষকে ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা তার ওপর।
বিশ্বে যত স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয় তার বেশিরভাগই চলে অ্যাপল বা গুগলের তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে।
কিছু দেশ- যেমন সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পোল্যান্ড ইতোমধ্যে এমন ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যাতে লোকজনের স্মার্টফোনে সংক্রমণের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্কবার্তা পাঠানো যায়।
ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি সহ অন্যকিছু দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাদের নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন এলাকার পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের মতো করে থার্ড পার্টি অ্যাপের মাধ্যমে কাজ করছে।
গুগল এবং অ্যাপল চাইছে সমস্ত উদ্যোগকে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে। ফলে কোন লোক যখন একটা স্মার্টফোন নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাবে, তখনও এই ব্যবস্থা কাজ করবে।
যদি তাদের এই উদ্যোগ সফল হয় তাহলে বিভিন্ন দেশে জারি করা লকডাউন এবং সীমান্তে কড়াকড়ি শিথিল করা সম্ভব হবে।
মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এই দুই কোম্পানি মিলে একটা সফ্টওয়্যার বিল্ডিং ব্লক, যা পরিচিত ‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং সফ্টওয়্যার’ নামে, সেটি প্রকাশ করবে।
অন্যান্য অ্যাপগুলো তখন একই ভিত্তিতে চালানো সম্ভব হবে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর যেসব তথ্য সংগৃহীত হবে, সেগুলো জমা থাকবে রিমোট কম্পিউটার সার্ভারে। কিন্তু একজন ব্যবহারকারীর প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করা সম্ভব হবে না।
আর কোন করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষ কোন কোন মানুষের সংস্পর্শে এসেছিল তা জানার কাজটি হবে তার স্মার্টফোনে, কেন্দ্রীয়ভাবে নয়।
এর ফলে কাউকে যখন ফোনে অ্যালার্ট পাঠিয়ে কোয়ারেনটিনে যেতে বলা হবে, তখন সেটি কেবল সেই লোকই জানবে, অন্যরা তা জানতে পারবে না।
অ্যাপল এবং গুগল বলছে, তাদের প্রযুক্তির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, যারা অ্যাপ তৈরি করবে, আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড উভয় ধরণের অপারেটিং সিস্টেমেই তাদের অ্যাপ কাজ করবে। এখানে কোন সমস্যা হবে না।
আর এখন যেসব কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ আছে, তার তুলনায় নতুন প্রযুক্তিতে ব্যাটারি খরচ কম হবে বলেও তারা আশা করছে। বিবিসি।
Like & Share our Facebook Page
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা