ভারতের বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ অবশেষে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে।
বুধবার দেশটির মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এই আইন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে চায়। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমানো মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে এই বিলে কিছুই বলা হয়নি।
আগামী সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (ক্যাব) নামের এ বিলটি গৃহীত হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বিলটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে পাস হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে পাড়ি জমানো হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিষ্টানরা ভারতীয় নাগরিকত্বের পথ প্রশস্ত হবে। পার্লামেন্টে এই আইন পাস হলে এসব শরণার্থীর নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য দেশটির ১৯৯৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হবে।
এই বিল আগামী সপ্তাহেই ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় তোলা হবে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন লোকসভায় বিলটি সহজেই পাস হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। বিজেপি আশা করছে, আঞ্চলিক দলগুলোর সাহায্য নিয়ে রাজ্যসভায় উতরে যাবে প্রস্তাবটি।
ওই বিলের গুরুত্ব সম্পর্কে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত মঙ্গলবার বিজেপি এমপিদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই বিল অগ্রাধিকার পাবে। এই বিল ঠিক জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার জন্য ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজনাথ বলেন, ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। প্রতিবেশী ধর্মান্ধ দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে, তারা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ছয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব প্রদানের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ, যা দেশের সর্বধর্ম সমন্বয়কে প্রমাণ করে।’
একদিন আগে ঝাড়খন্ডে নির্বাচনী এক প্রচারে অংশ নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) বাস্তবায়ন করে সব অনুপ্রবেশকারীকে ভারত থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
প্রথমবারের মতো অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সময়সীমা উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই সারা দেশেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার বাস্তবায়ন হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৬ গত লোকসভায় পাস করাতে ব্যর্থ হয় দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার। পরে পার্লামেন্টের একটি যৌথ কমিটি দ্বারা বিলটির তদন্ত হয়েছিল।
নাগরিকত্ব বিল অনুমোদনের পরপরই আসামসহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করে জনতা। আসাম সংখ্যালঘু সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন সড়কে নেমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়ালের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। আন্দোলন আসামজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
কিন্তু দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল এটির বাস্তবায়ন।
তাই নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ফের পার্লামেন্টে উঠতে যাচ্ছে বিলটি। তবে আগের বারের প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখে এবার আগেভাগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এনডিটিভি।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা