শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক এগিয়ে। কেননা বাংলাদেশের মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণে ভারতীয় নারীদের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে এবং তুলনামূলকভাবে এক্ষেত্রে তাদের সমস্যাও অনেক কম। বাংলাদেশের নারীদের এই স্বীকৃতি দিয়েছে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ব্যক্তিত্ব অমর্ত্য সেন।
গত শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে প্রতীচী ট্রাস্ট আয়োজিত ‘ভারতীয় নারী: আজকের চালচিত্র, আজকের করণীয়’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী এক আলোচনায় যোগ দেন অমর্ত্য সেন। সেখানে আলোচনার শেষদিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।
তিনি ভারতীয় নারীদের শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, যেখানে প্রতিবেশী দেশটি নারীদের উন্নয়নে এত কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে সেখানে ভারত কেন পারছে না।
অমর্ত্য সেনের ভাষায়, ‘বাংলাদেশ নারীদের শিক্ষা বিস্তারের জন্য অনেক কিছুই করছে। কিন্তু ভারত এখনও কেন সেসব পারছে না। শিক্ষায় ভারত এমন কি পশ্চিমবঙ্গের চেয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক এগিয়ে। তারা যেগুলো পারে আর আমরা এখনও সেগুলো করে উঠতে পারিনি। এমনকি স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও তারা অনেক এগিয়ে গেছে। ফলে ভারতীয় নারীদের তুলনায় তাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। আর এটাই সত্য যে, স্কুলে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছে। এই পার্থক্যটা কেন হলো? আমরা তো সবাই বাঙালি। আমাদের এটা নিয়ে চিন্তা করা জরুরি।’
এর আগে ওই আলোচনায় দেয়া বক্তব্যে তিনি ভারতের নারী ও কন্যাশিশুদের নানা সমস্যা তুলে ধরেন।
নিজের বক্তব্যে দিল্লির সাম্প্রতিক সহিংসতার ওপরও আলোকপাত করেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, ‘সমগ্র ভারতে এখন হিংসার আগুন জ্বলছে। দিল্লির আগুনটাই শুধু আমাদের চোখে পড়ে। সেখানকার কথাই বলি। এই দাঙ্গায় সংখ্যালঘু কোনো পরিবারের সদস্য বা ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারা হতে পারে। প্রতিহিংসাপূর্ণ হামলার শিকার কোনো সংখ্যাগুরু পরিবারের সদস্যও হতে পারেন। কিন্তু, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কার? সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওইসব পরিবারের কন্যা শিশুরা।’
‘সুতরাং আমরা বলতে পারি যে এটি নারীদের জন্য এক ধরনের সমস্যা। কারণ এই ধরনের ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যে তারা (মেয়েরা) স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চেয়ে বেশি সহিংসতা মুখোমুখি হতে পারে এবং তাদের প্রতি সহিংসতা ও নিপীড়ন আরও বেশি বেশি হতে পারে। ফলে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সবদিক থেকে এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নারী ও কন্যা শিশুর জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে,’বলছিলেন নবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
এসময় তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আফসারা অনিকা মিনার প্রসঙ্গটি নিয়েও কথা বলেন। আমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি সংবাদপত্রগুলো থেকে যা জেনেছি তার (অনিকা) প্রধান দোষ হচ্ছে তিনি ইন্টারনেটে কিছু প্রতিবাদ সমাবেশের ছবি আপলোড করেছিলেন। এই আইনের জন্য তাকে দেশ ত্যাগ করতে বলার পক্ষে এটি যথেষ্ট শক্ত যুক্তি কিনা তা নির্ধারণ করা কঠিন।’
এ নিয়ে তাকে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কারণ বিষয়টি খবরের কাগজগুলিতে মাত্র সাড়ে তিন মিনিট পড়ে জেনেছি। তাই এসব বিষয়ে রায় দেওয়ার অভ্যাস আমার নেই। আমি যদি ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতাম তবে অবশ্যই আমি মন্তব্য করতাম।’
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ওই ছাত্রীকে সম্প্রতি ১৫ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আফসারা দেশটির আলোচিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের কিছু ছবি পোস্ট দেয়ায় তাকে এতবড় শাস্তি দিয়েছে মোদি সরকার। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওই বাংলাদেশি ছাত্রীর পক্ষে নৈতিক ও আইনি সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন।
অনুবাদ: সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদা আকতার
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা