সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : আমাদের ৫৭ নদী বিদেশ থেকে এসেছে এর মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে এসেছে। এসব নদী ভারতে উৎপত্তি নয়, কোনটা চীনে, কোনটা বার্মা, নেপালে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একাধিক দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদী আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে গণ্য হয়। ফলে উজানের দেশ ভাটির দেশকে বঞ্চিত করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। অথচ ভারত আমাদের বঞ্চিত করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে আইন লংঘন করছে।
‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’ এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’এর সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডাক্তার জাফরউল্লা চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. এনামুল হক, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, কমিউনিস্ট লীগের অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বিশিষ্ট রাজনীতিক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, গরীর মুক্তি আন্দোলনের সামছুজ্জামান মিলন, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সামছুল আলম, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)র সিরাজুম মুনীর, গণ দলের গোলাম মাওলা চৌধুরী, স্বাধীনতা পার্টির ফয়েজ হোসেন, মানবিক রাষ্ট্র আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক পরিষদের মোঃ সামছুদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুইয়া, জুলহাজ নাইন বাবু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নদীর সমস্যা রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক নয়। বহু আগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর মুক্ত ধারা ও রক্তকরবী নাটকে নদীর সমস্যা তুলে ধরেছিলেন, সৈয়দ ওয়ালিউল্লা তাঁর তিনটি উপন্যাস লাল সাবুজ, চাঁদের সমস্যা, কাঁদো নদী কাঁদো তে নদীর সমস্যা উল্লেখ করে বলেছেন নদী কাঁদছে, নদীর মরছে, ফেরী ঘাট সরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীরা নদী-পানিসহ দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মৌলানা ভাসানী ফারাক্কাসহ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে লংমার্চসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছেন।
তিনি বলেন, নদী পানির সাথে আমাদের সমুদ্র ও তার সম্পদ নিয়ে আন্দোলনের কথাও এ কমিটিকে ভাবতে হবে। নদীর সংকটের কারণ কি, সমাধানে করণীয় কি তা জনগণকে জানানোর জন্য প্রকাশনা লাগবে, এটা শুধু ভারত-বাংলাদেশের সমস্যা নয় তাই আমাদের অধিকারের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে মনমোহন সিং, নরেন্দ্র মোদি উভয়ে আমাদেরকে ছেলে ভোলানো আশ্বাস দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। তারা বলছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার পানি চুক্তিতে রাজী হচ্ছে না। এটা যে খুবই খোড়া যুক্তি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে তারা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা দিতে চায় না। কারণ ভারতের সংবিধানের ২৫৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে কোন দেশের সাথে চুক্তি করতে কেন্দ্রীয় সরকারই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি বলেন, ভারতকে অনেকে বন্ধু রাষ্ট্র বলেন, বন্ধু রাষ্ট্রের নমুনা কাটা তারের বেড়া, সীমান্তে হত্যা, উপকূলে রাডার স্থাপন, বাণিজ্য ঘাটতি দূর না করা। তিনি ভারত কর্তৃক পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি করেন ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভারতের আগ্রাসন ও অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে ভারত বঞ্চিত করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ চুপ করে বসে থাকতে পারে না। লক্ষ লক্ষ শহীদের জীবনদানের বিনিময়ে অর্জিত একটি দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা কতিপয় নেতা-নেত্রী বা দু-চারটি রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধির কাছে আমরা বিসর্জন দিতে পারি না। এমতাবস্থায় আমাদের নদী পানিসহ সকল প্রকার ন্যায্য অধিকার আদায় এবং দেশের সার্বভৌমত্ব হরণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও শাসক শ্রেণির বাইরে সকল দল মত নির্বিশেষে যারা ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই।
লিখিত বক্তব্যে আরও কেবলমাত্র অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক সকল মানুষের দৃঢ় ঐক্যই এক্ষেত্রে আমাদের কাক্সিক্ষত সাফল্য এনে দিতে পারে। তাই আমরা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও শাসক শ্রেণির বাইরে সকল দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণকে আজ মাতৃভূমির নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ তথা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। উল্লেখ্য ৩০টি রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, নদী ও পানি বিশেষজ্ঞসহ ব্যক্তিবর্গ প্রাথমিকভাবে এই ‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’ এর সাথে যুক্ত হয়ে এই আন্দোলনের সংস্থা গড়ে তুলেছেন। বাস্তবে এটা একটা জাতীয় আন্দোলন সাম্প্রদায়িক শক্তি ও শাসক শ্রেণির দলের বাইরে সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ সকলে মিলে এই আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে। ফলে দল, মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সকল জনগণ নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখিত সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি ও ব্যক্তিদের নিয়ে ‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’ জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার জন্য একটি ১১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে জনাব নঈম জাহাঙ্গীর দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি সকলের সাথে সমন্বয় করে কার্যপরিচালনা করবেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয় : বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি প্রবাহ, সংকট ও সমাধানে করণীয় বিষয়ে জাতীয় সেমিনার করা হবে, নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ঢাকায় গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে, পদ্মা, তিস্তা, ফেনীসহ অভিন্ন নদীর সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত অববাহিকা-এলাকা অভিমুখে লংমার্চ, গণঅভিযাত্রা করা হবে। তবে, করোনা ভাইরাসের কারণে আপাতত এটি স্থগিত থাকবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা