ফজলুল বারী : জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরির পর ডায়নোসরের ভূমিকায় অভিনয় করে ডাবল সেঞ্চুরি সেলিব্রেট করেছিলেন মুশফিক। প্রথমে অনেকে এটিকে বাঘ বাঘ মনে করলেও পরে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক তা স্পষ্ট করেন। টেস্ট ক্রিকেটে এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অর্জনের মালিক বলেছেন, তাঁর ছেলে ডায়নোসরের ভূমিকায় অভিনয় করে। ছেলেকে ওই অর্জন উৎসর্গ করতেই তিনি এমন করেছেন। সুব্রত সবুজ নামের একজন ওই ছবির নীচে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘জিম্বাবুয়ের সাথেই পারবে। তা বাঘের লগো ঢেকে বাঘের মতো অঙ্গভঙ্গি করা কি বেমানান নয়!’ বেচারা মুশফিকের ক্যারিয়ারটাই এমন। নীরবে দেশটাকে শুধু দিয়েই যাচ্ছেন।
২০০৫ টেস্ট অভিষেক হয় মুশফিকের। কিন্তু ২০১০ সালে এসে পান প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। সেটাও ভারতের বিপক্ষে। চট্টগ্রামে। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পান ২০১৩ সালে। সেটি ছিল শ্রীলংকার বিরুদ্ধে। মুশফিকই প্রথম বাংলাদেশি যিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন। তবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি দুটি। সোমবারের ডাবল সেঞ্চুরির আগে আফ্রিকার দলটির বীরুধে ২০১৮ সালে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন। কিন্তু এতো কিছুর অরেও প্রশংসা তাঁর কপালে জোটে সামান্য। মুশফিককে অবশ্য এ নিয়ে কখনো হা হুতাশ করতে দেখা যায়না। মায়ের গুন বলতে হয়। কথা বলতে পারেননা মুশফিকের মা।
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যখন ক্রিকেট ট্যুরে ঘুরে বেড়াই তখন খেলোয়াড়দের খুব কাছে থেকে দেখি। ছোটখাট গড়নের মুশফিকটা খুব ক্যালকুলেটিভ। সময় ধরে প্র্যাকটিসে আসা। নামাজ পড়া, কোন কিছুই বাদ দেননা। মুসলমানদের ধর্মে আছে নামাজের পোশাকে যাতে জীবজন্তুর ছবি না থাকে। নামাজের সময় কোন এক সময় পোশাকের বাঘের ছবিটা ঢেকে ছিলেন। পরে ছবি তোলার সময় ভুলে সেটি খেয়াল করেননি। কিন্তু বেচারা মুশফিকতো! এটাও তার দোষের তালিকায় জায়গা পেয়েছে!
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জয় নিয়ে অনেক নাক-সিটকানো প্রতিক্রিয়া দেখছি! যেন বাংলাদেশ আমেরিকা আর কী! রাশিয়ার সঙ্গে সারাক্ষন ভাব দেখিয়ে চলে! সবাই যার যার প্রতিক্রিয়ার সময় যাতে আয়নায় একটু নিজেকেও দেখে নেন। কিছু কিছু দলের জয়ের ধারায় ফিরতে কিছু কিছু দলকে প্রয়োজন হয়। যেমন ভারত-পাকিস্তান যখন জয়খরায় পড়ে, তখন জয়ের ধারায় ফিরতে বাংলাদেশের মতো দলের সঙ্গে খেলতে ভালোবাসে। শচিন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি অনেক দিন হচ্ছিলোনা। সেটি পেতে অবশেষে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে হয়েছে।
আর বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায়,এন্ডি ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়ের জিম্বাবুয়ে কিন্তু তখন বাংলাদেশের চেয়ে ভালো দল ছিল। তখন বাংলাদেশ হারতো জিম্বাবুয়ের কাছে। খেলায় তারা পিছিয়েছে, বাংলাদেশ এগিয়েছে। এই জিম্বাবুয়ে কিন্তু কিছুদিন আগে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ভালো খেলেছে। ঢাকায় এসে রাহী-নাঈম হাসান-তাইজুল, মুশফিক-মমিনুল ভালো খেলায় পেরে ওঠেনি। দল যখন খারাপ খেলে তখন মন ঢেলে দুয়ো ধবনি দেন। ভালো খেললে একটু প্রশংসা দিতে চাননা, এ কেমন বাংলাদেশ দলের সাপোর্টার?
আবার মুশফিক প্রসঙ্গে আসি। গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের সময় মুশফিকের বাবা-চাচা খেলা দেখতে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের শতাধিক জার্সি পাঠান আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা। বিশ্বকাপের ভেন্যুতে ভেন্যুতে পরনে জার্সি নেই এমন বাংলাদেশিদের সেগুলো আমি উপহার হিসাবে পরিয়ে দিতাম। সেই জার্সিগুলো আনতে গিয়ে মুশফিকের বাবা’র একটা ইন্টারভ্যু করেছিলাম, যেখানে মুশফিকের সৃষ্টি পর্ব উঠে এসেছিল। সেই বিশ্বকাপের আগ মূহুর্তে ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে মুশফিককে সরিয়ে মাশরাফিকে অধিনায়ক করা হয়। অনেকের আশংকা ছিল এতে মাঠের খেলায় প্রভাব পড়তে পারে। মুশফিকের বাবা সেই আশংকা নাকচ করে দিয়ে বলেন মাশরাফি না হয়ে অন্য কেউ হলে তেমনন কিছু হতে পারতো। মাশরাফির সঙ্গে যেহেতু মুশফিক সহ দলের সবার চমৎকার বোঝাপড়ার সম্পর্ক, তাই এমন কিছু হবেনা। তাই হয়েছিল।
সেই বিশ্বকাপ বাংলাদেশের এ যাবতকালের সেরা বিশ্বকাপ। সদ্য বিদায়ী অধিনায়ক মুশফিক সহ দলের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতার কারনেই সেটি সম্ভব হয়েছে। এরপরও কেনো জানি দলের জন্যে নিবেদিতপ্রান মুশফিকের প্রশংসা কম হয়। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ঘোরাঘুরির সময় বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন সম্পর্কেও খেলোয়াড়দের নানা সরেস মন্তব্য শুনেছি। পাপন এসব শুনেন কীনা জানিনা। শুনলে দলের ভালো হতো। বাংলাদেশ দলে প্রায় নানা পরিবর্তন হয়। দল হিসাবে এটির ধারাবাহিকতা নেই। একটি আনস্মার্ট নেতৃত্বের কারনে স্মার্ট কোচিং স্টাফরা এখানে টিকতে না পেরে চলে যান। এ খবর যায় ক্রিকেট দুনিয়ায়। এরজন্যে বাংলাদেশের এখন কোন কোচ চলে গেলে নতুন একজন কোচ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
খেলোয়াড়রা এখানে কী রকম দমবদ্ধ পরিবেশে থাকেন খেলেন, তা শুধু ওয়াকিফহালরা জানেন। সাকিব মুখের পর সব বলে দেন বলে তাকে পাপন উল্টো ভয় পান। মুশফিক শুধু খেলাটা ভালো পারেন। কৌশলী কথায় ভালো নন বলে সর্বশেষ টেস্ট অধিনায়কত্বও হারিয়েছেন। সর্বশেষ খেলোয়াড়দের আন্দোলনের সময় প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশ দলে কথাবলার মুক্ত পরিবেশ নেই। আন্দোলনের মুখে খেলোয়াড়দের দাবি মানতে গিয়েও আর কাউকে না পেরে মুশফিককে আক্রমন করেছেন পাপন! পাকিস্তান ট্যুরের আগে বলাই ছিল খেলোয়াড়দের যার ইচ্ছা যাবেন যার ইচ্ছা যাবেননা। পারিবারিক আপত্তিতে মুশফিক যাননি। কিন্তু এ নিয়েও তাকে বিসিবি বসের কটাক্ষ শুনতে হয়েছে! ডাবল সেঞ্চুরির পর আবার পাপন এক ধরনের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বলেছেন চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসাবে পাকিস্তানে এপ্রিলের সফরে মুশফিককে যেতে হবে! এটি অভদ্রতা। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট বাংলাদেশ আজ অভদ্র নেতৃত্বে চলছে। সেখানে নিরেট এক ভদ্র ক্রিকেটার মুশফিকের জন্যে খারাপ সময়। খেলোয়াড়ি জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়ে দাঁড়িয়েও।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা