ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগীতার ঘোষণা দেয়ায় নেদারল্যান্ডের কুখ্যাত এমপি গিয়ার্ট উইল্ডার্সের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামালীগসহ ১৩ টি সংগঠন।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। এসময় নেতৃবৃন্দ ৭৭টি মসজিদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত বাতিল, সিলেবাসে এবং সমাজে ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ এবং রমজান মাসে স্কুল কলেজে সকল পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিশাল মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।
মানববন্ধনটি করেছে ওলামা লীগসহ সরকারের পক্ষের সমমনা ১৩টি দল।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অথচ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার চতুর্থ অনুচ্ছেদে স্বাধীনতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে: “স্বাধীনতার অর্থ হল এমন সব কিছু করার ক্ষমতা যা অন্য কারো উপর আঘাত হানে না বা অন্য কারো ক্ষতি করে না।” আন্তর্জাতিক আইনে এটা স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, বাক স্বাধীনতা সীমিত এবং এর নামে যে কোনো সীমারেখা লঙ্ঘন করা যাবে না।
সুতরাং বাক-স্বাধীনতার নামে ভন্ডামী না করে অবিলম্বে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী কুখ্যাত এমপি গিয়ার্ট উইল্ডার্সকে ফাঁসি দিতে হবে। তার সহযোগী সকল নাস্তিকদেরও মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। অন্যথায় নেদারল্যান্ডের কুটনৈতিক সর্ম্পক ছিন্ন করতে হবে। সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বকে নেদারল্যান্ডের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে হবে। মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার বিপরীতে নেদারল্যন্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরীতে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে এবং সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে হবে। এতে দেশে-বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণ সরকারকে ধর্মপ্রাণদের সরকার হিসেবে গণ্য করবে।
বক্তারা বলেন, সুরা নূরের ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “যেসব পবিত্র ঘরসমূহে সকাল সন্ধ্যায় মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পবিত্র নাম স্মরণ ও তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা হয় সে সব পবিত্র ঘর সমূহকে উত্তমরূপে সংরক্ষণ করো।” অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা যাবেনা। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহ্ আনহু হতে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে রাস্তা হিসেবে (অন্য কোন কাজে) ব্যবহার করো না। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করো।
বক্তারা বলেন, কথিত উন্নয়নের নামে ১৯৮৯ সালে নুর মুহাম্মদ মিয়ার দানকৃত ১৯৯৫ সালে রেজিস্ট্রি মূলে ওয়াকফকৃত ৬ শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হাতিরঝিলের আলোচিত ভাসমান বায়তুল মাহফুজ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ফেনীর মহিপালে ফ্লাইওভারের জন্য মহাপবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কয়েক বছর আগে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় কামাল পাশা সরণির উন্নয়নের নামে ৫টি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ও একটি মাদরাসার অনেকাংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি নদী তীরের আরো ৭৭টি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বক্তারা বলেন, মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেও ২০১৭ সালে মিরপুর-২-এর ২২/১৯ বড়বাগ ঠিকানার ‘নাজারেথ নভিসিয়েট ও এসএল লুইজেন সিস্টারস নামক একটি গির্জা না ভেঙ্গে ৩ রাস্তার মোড় করে সংযুক্ত করা হয়েছে। হাতিরঝিল রাস্তা বানাতে গৌরাঙ্গ মন্দির না ভেঙ্গে রাস্তা বানানো হয়েছে। হিন্দু বাউলদের বাড়িঘর বাচাতে নরসিংদীর শহর রাস্তার বাধের কাজ ৯ বছর আটকে রাখা হয়েছে। সিলেটে গির্জার দেয়াল বাচাতে রাস্তার উন্নয়ন বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের পুটিয়ার ইন্দ্রপুর মহাসড়কের নির্মাণ কালে ১টি মন্দির ও শ্মশান ও হিন্দুদের কয়েকটি ঘর সরানোর প্রয়োজন থাকলেও সেতুমন্ত্রী আশ্বাস ১টি মন্দির ও শ্মশান, হিন্দুদের বাড়িঘর অক্ষত রেখে রাস্তা ঘুরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গীর্জা, মন্দির এমনকি হিন্দুদের বাড়িঘর অক্ষত রাখলেও সরকারিভাবে কেন মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কেন?
সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রত্যেক মুসলমানকে ইসলামী আদর্শে উজ্জিবিত থাকার অধিকার বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র নিশ্চিত করে। অথচ সে সুবিধা থেকে দেশের মুসলমানগণ বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারণে মাদক, সন্ত্রাস, বাবা-মাকে হত্যা, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা সমাজে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষা সিলেবাসে এবং সমাজের সর্বস্তরে ইসলামী চেতনার প্রতিফলনে রাষ্ট্র ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তারা বলেন, ‘ধর্ম শিক্ষা থেকে দূরে সরে আসায় শিশুও নারী নির্যাতন, হত্যা বেড়েছে। এজন্য নীতি নৈতিকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ কোন ক্ষেত্রেই ইসলামী শিক্ষা নেই। ইসলামী মূল্যবোধ তুলে দেয়া হয়েছে। ‘সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ এটাও বর্তমান সংবিধান নেই। এতে মুসলমানরা ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে। খোদাভীতি ভ‚লতে বসেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরকীয়ার মতো অপরাধে লিপ্ত হয়ে মা-বাবা কর্তৃক শিশু হত্যার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটাচ্ছে। মাদক, সন্ত্রাস, বাবা-মাকে হত্যা, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা সমাজে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষা সিলেবাসে এবং সমাজের সর্বস্তরে ইসলামী চেতনার প্রতিফলনে রাষ্ট্র ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বরস্বতী পূজা হিন্দুদের বিশেষ কোন পূজা নয়। তারপরেও এর জন্য জাতীয় পর্যায়ে ভোট পিছিয়ে দেয়া আর মুসলমানদের রোজার মাসে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা ও জাতীয় পরীক্ষা নেয়া বিশেষ বৈষম্যমূলক। এ বৈষম্য বজায় রাখলে জামাত-হেফাজত ইস্যু তৈরী করবে। কাজেই এ বৈষম্য চলতে পারেনা এবং এ ইস্যু তুলে দেয়া যাবেনা।
বক্তারা বলেন, স্বরস্বতী পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে দূর্গা পূজার মতো বিশেষ কোন পূজা নয়। তারপরও হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবীর প্রতি একাত্ম হয়েছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। অথচ এবারের এইচএসসি পরীক্ষা ফেলানো হয়েছে পবিত্র মাস রমজান শরীফ মাসে। রমজান মাসের সম্ভাব্য তারিখ ২৩শে এপ্রিল থেকে ২৩শে মে, । অপরদিকে এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন ফেলানো হয়েছে ১লা এপ্রিল থেকে ১৩ই মে । যা সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। এর সরকারকে বিতর্কিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক মহল এরকম বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সমাবেশ ও মানবন্ধনে সমন্বয় করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি- পীরজাদা, পীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান বিপ্লবী জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, (পীর সাহেব, টাঙ্গাইল)। বক্তব্য রাখেন- সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি- আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক- হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দপ্তর সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, লায়ন আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, হাজী হাবীবুলøাহ রূপগঞ্জি- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ মুজিবুর রহমান আল মাদানী, হাফেজ ক্বারী মুহম্মদ শাহ আলম ফরাজী, মুফতি মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সবুর মিয়া, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, হাফেজ মুহম্মদ আব্দুল বারী, কারী মাওলানা মুহম্মদ আসাদুজ্জামান আল কাদেরী, আলহাজ মুহম্মদ খোরশেদ আলম রেজভী, কাজী অধ্যাপক মাওলানা মুহম্মদ নোমান চৌধুরী, সহ সভাপতি- মাওলানা মুহম্মদ শোয়েব আহমেদ গোপালগঞ্জী, হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আল আমীন, আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম সিদ্দীকি আল কুরাইশি, হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সোবাহান, মাওলানা মুহম্মদ ওমর ফারুক গোপালগঞ্জী, মাওলানা মুহম্মদ আব্দুর রব-সা:সম্পাদক শ্রীনগর উপজেলা ওলামা লীগ, মাওলানা মুহম্মদ মাহবুব আলম, কাজী মাওলানা মুহম্মদুল্লাহ, মাওলানা মুহম্মদ মোকাম্মেল হুসাইন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ চেয়ারম্যান- আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার। মিছিল শেষে শহীদ বঙ্গবন্ধু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহের মাগফিরাত কামনা করে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হায়াতে তৈয়বার জন্য দোয়া মোনাজাত করেন- আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা