শিক্ষা, রাজনীতি, কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বুধবার ( ১৮ ডিসেম্বর) বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে সমাবেশ ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন সভায় একথা বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন একথা বলেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেইজিং ঘোষণা এবং কর্মপরিকল্পনা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য স্বপ্নদর্শী এজেন্ডা। এটির মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের সরকার সমূহ ঐক্যমতে আসে জেন্ডার দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা এবং জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশ সরকার সকল ক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। শিক্ষা, রাজনীতি, কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শোকো ইশিকাওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউটের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর তৌহিদুল হক।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেস, নারীর প্রতি সহিংসতাকে বৈশ্বিকভাবে আন্তর্জাতিক গণহত্যার শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এটি নারীর অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। তিনি নারী নীতি বাস্তবায়নে সরকার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় কার্যক্রম গ্রহণের আহবান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন বেইজিং ঘোষণা এবং কর্মপরিকল্পনা ছিল নারী আন্দোলনের জন্য মাইলফলক অর্জন। বাংলাদেশে ২৫ বছরে নারীর অগ্রগতির জন্য অর্জন হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ও বাংলাদেশ মডেল হিসেবে পরিচিত। তবে নারীর জীবনমান এবং গুণগত মানের পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জ আছে বৈষম্যমূলক আইন, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার, ও বৈষম্যমূলক রীতিনীতির কারণে। বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ দূর করে সমস্ত ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উপদেষ্টা সেলিনা খালেক নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য এবং নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য পুরুষদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শোকো ইশিকাওয়া বলেন, বেইজিং ঘোষণার বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রজন্মের সাথে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে হবে। সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ন্যাশনাল একশন প্ল্যান কার্যকর করতে বাংলাদেশ সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আশা করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, নারীর সম্পত্তি অধিকার প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা এখনও সচেতন নয়। হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে সম অধিকার নেই। নারীর ক্ষমতায়নে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, নারীর মর্যাদা হচ্ছে সমাজের প্রকৃত পরিচায়ক। অনেক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্য সমতা প্রতিষ্ঠা হয়নি। সংবিধানে কেবল জনজীবনে সমতার কথা বলা হয়েছে কিন্তু প্রাইভেট ক্ষেত্রে সমতার কথা বলা হয়নি। নারীর সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান পুন: সংশোধনের করতে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ইনস্টিটিউটের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর তৌহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের নারীদের সমস্যার ধরণ অন্যদেশের তুলনায় ভিন্ন। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হলে নারী, পুরুষ সকলকে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে, ছেলে শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হলে মায়েদের সচেতন হতে হবে।
সভায় বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন টার্নিং পয়েন্ট এর অ্যাডভোকেসি অফিসার শিখা খাতুন । তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মসূচি। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘নারীর চোখে বিশ্ব দেখার’ আহ্বান জানিয়ে নারীর ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত এই ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনাকে বলা যায় একটি সমন্বিত, সামগ্রিক রূপরেখা।
সমাবেশ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠন সদস্য শিল্পী আখতার, সুরাইয়া পারভীন, রোকেয়া সদনের শিল্পীবৃন্দ এবং আদিবাসী ব্যান্ডদল এফ মাইনর। পটগান পরিবেশন করে রুপান্তর।
সমাবেশ অনুষ্ঠানে বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সংগঠন সমূহ সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশে বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সংগঠন, সরকারের নীতি নির্ধারক, মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, আদিবাসী ও দলিত প্রতিনিধি এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তরুণ তরুণীসহ প্রায় ৩ শতাধিক উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক এর জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি বিভাগের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর নিশাত সুলতানা এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এ্যডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।
কমিটির উদ্যোগে (কমিটির সদস্য সংগঠন: আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্র্যাক, ব্লাস্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অভিযান, নারী প্রগতি সংঘ, জাগো ফাউন্ডেশন, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, এনগেজ মেন এন্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ঢাকা ওয়াইডব্লিউ সিএ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং টার্নিং পয়েন্ট)।
লালসবুজের কথা’র ফেসবুক পেজ :
আরও পড়ুন : রাজাকার যখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে তখন খুব খারাপ লাগে : আব্দুস সামাদ তালুকদার
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা