বুলবুল তাণ্ডবে ১১ জেলায় নিহত ১৪

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর তাণ্ডবে ১১ জেলায় ঘর ও গাছচাপা পড়ে নারীসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে রোববার ভোররাতে আঘাত হানে বুলবুল।বুলবুলের তাণ্ডবে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এছাড়া ঝড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক গাছ উপড়ে পড়েছে। এর মধ্যে শুধু সাতক্ষীরায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে খুলনায় ২ জন, বাগেরহাটে ২ জন, পটুয়াখালী ১ জন, পিরোজপুরে ১ জন, মাদারীপুরে ১ জন, ভোলায় ১ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, শরীয়তপুরে ১ জন, বরিশালে ১ জন, গোপালগঞ্জে ১ জন বরগুনায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে খুলনার দিঘলিয়া ও দাকোপে গাছের নীচে চাপা পড়ে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন- প্রমিলা মণ্ডল (৫২) ও আলমগীর হোসেন (৩৫)।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র তাণ্ডবে বাগেরহাটের রামপাল ও ফকিরহাটে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।রোববার দুপুরে ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলী গ্রামে গাছচাপায় হিরা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। হিরা বেগম একই গ্রামের মাসুম শেখের স্ত্রী।

এর আগে সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভরসাপুর গ্রামে গাছচাপা পড়ে সামিয়া খাতুন (১৫) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।

পটুয়াখালীতে দমকা হওয়ায় গাছ উপড়ে বসত ঘরের ওপর পড়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলায় হামেদ ফকির (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। পেশায় তিনি ছিলেন একজন মৎস্যজীবী।

বুলবুলের তাণ্ডবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নের লড়া গ্রামে ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে ননী গোপাল মণ্ডল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা যান।

রোববার দুপুরে তিনি মারা যান। এসময় গুরুত্বর আহত হয় একই পরিবারের সুমী (৮) ও নাসির (১৬) নামে দুই শিশু। ওই উপজেলার ৯ নম্বর কলারদোয়ানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাসানাত ডালিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী মারা গেছেন।

রোববার বেলা ৩ টার দিকে বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে ঘরের ভিতর আলমারির নিচে চাপা পড়ে তিনি মারা যান।

মাদারীপুরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সদর উপজেলার ঘটমাঝি এলাকায় একটি গাছ বসত ঘরের ওপর আজিজ খানের স্ত্রী সালেহা বেগম আহত হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া রাজৈর উপজেলায় গাছে নিচে পড়ে ৬ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে চৌহদ্দি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম ভেঙ্গে গেছে।

ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার ডুবে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে ভোলায় দেড় শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। এদের মধ্যে গুরুতর ৫ জনকে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে ভোলার সদরের ইলিশা ব্রিকস, রিয়াদ ব্রিকস, মায়ের দোয়া ব্রিকস, সাবাব ব্রিকসসহ ৬৩টি ফিল্ডের কয়েক লাখ কাঁচা ইট গলে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

লঞ্চসহ সবধরনের নৌযান চলাচল শুরু

বুলবলের তাণ্ডবের পর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় আবুল কালাম (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ঘরের উপর গাছ পড়ে মো. আলী বক্স ছৈয়াল (৭০) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে।

রোববার বিকাল ৩টার দিকে ব‌রিশালের উজিরপুর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র আঘাতে ঘরচাপা পড়ে আশালতা মজুমদার (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা মারা যান।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে গাছ চাপা পড়ে সেকেল হাওলাদার (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।

রোবিবার দুপুরে ঝড়ের সময় উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামের মৃত হাসান উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে সেকেল হাওলাদার গাছচাপা পড়ে মারা যান।

বরগুনা ও বামনা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বরগুনা সদর ও বামনা উপজেলায় দুইজন মারা গেছেন।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিচুর রহমান জানান, বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর এম বালীয়াতলী এলাকার ডিএন কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে হালিমা খাতুন (৬৬) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি সদর উপজেলার বানাই গ্রামে। হালিমা খাতুন নামের ওই নারী অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন বলে তিনি জানান।

এছাড়া বামনা উপজেলার উত্তর কাকচিড়া গ্রামে ঝড়ের আতঙ্কে শিশীর বিশ্বাস (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঝড়ের সময় ছুটাছুটি করতে গিয়ে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন।