অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা
ফজলুল বারী
বিদেশে দূরদেশে থাকি। মাতৃভূমি জন্মভূমি বাংলাদেশ দেখি টেলিভিশনের পর্দা, অনলাইন মিডিয়ায় চোখ রেখে। বুধবার টিভিতে, অনলাইনে চোখ রেখেই বিশ্বকাপ বিজয়ী বীর যুবাদের দেশে ফেরা দেখেছি। বীর ছেলেদের নিয়ে জাতির উচ্ছাস বিদেশে দেহ নিয়ে থাকা আমাদেরও স্পর্শ করে। সবার মতো আমরাও আনন্দে কাঁদি। কিন্তু উচ্ছাস দেখতে গিয়ে দেখেছি বিমান বন্দরে একটি বিশৃংখল সম্বর্ধনা! দুই বছর ধরে যে দলটি এত পরিকল্পনা করে খেললো, এবারের অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলায় পরিকল্পনা করে খেলে খেলে বাংলাদেশ পৌঁছেছে জয়ে বন্দরে, যারা এই প্রথম একটি বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরলো, তাদের বিমান বন্দরে অভ্যর্থনার কোন সুশৃংখল পরিকল্পনা সাজাতে পারেনি বড়রা। বিমান বন্দরের ভিতরে বাইরে ছিলেন হাজার হাজার মানুষ! ভালোবাসার মানুষেরা এলোমেলো বিশৃংখলভাবেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো বিশ্বজয়ী দলকে। অথবা ভালোবাসা বুঝি এমনই বিশৃংখল হয়। প্ল্যান-পরিকল্পনা-শৃংখলা করে ভালোবাসা যায় না। কিন্তু এ নিয়ে বাংলাদেশকে সাবধান হতে হবে। নতুবা বিপদ হয়ে যেতে পারে। কেনো বিপদ হতে পারে সে প্রসঙ্গে পরে আসি।
অনুর্ধ উনিশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলতে জানুয়ারির ৩ তারিখে ঢাকা থেকে তখন এক রকম নীরবে এই দলটি উড়ে গিয়েছিল দক্ষিন আফ্রিকার পচেফস্ট্রুপে। বিশ্বকাপ নিয়ে ফেরার কারনে তাদের নিয়ে অপেক্ষাও ভিন্ন হয়। কারন ‘যে যাহা করেন তাহার একটি সুন্দর পরিণতি সকলের কাছে প্রশংসিত হয়।‘ ব্যর্থদের কোন প্রশংসা নেই। যেমন জাতীয় দল এখন প্রায় চুপিসারে দেশে ফিরে আসে। আর নানান প্রতিকূলতা জয় করে এই যুবা দলটি পৌঁছে ফাইনালে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১২ রানে গুটিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল দলটি। তানজিম হাসান-রকিবুল হাসানদের নৈপূন্যে সে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ফাইনালে। প্রতিপক্ষ ভারত হওয়াতে তখন সবার মনের মধ্যে লুকনো ভয়ও ছিল। স্নায়ুর চাপে কেনো জানি ভারতের সামনে শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেনা বাংলাদেশ। ভারতীয় এক পিচ্চি বিষ্ণুর হাতে প্রায় নাকালও হয়ে যাচ্ছিলো যুবাদের দলটি। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলে আনেন কাপ্তান আকবর। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্যে তাঁর নতুন নাম হয়েছে ক্যাপ্টেন কুল। খেলা শেষে আমরা ট্র্যাজেডির আরেক গল্পও শুনেছি। বিশ্বকাপ চলাকালীন বোনের মৃত্যু হয় আকবরের। সে কান্না চাপা দিয়ে দেশের জন্যে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন আকবর দ্য গ্রেট।
বিজয়ী দলের দেশে ফেরা বরন করতে বিসিবির আয়োজন নিয়ন্ত্রিত থাকার কারন বোধগম্য। কারন এরমাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা দিয়েছেন ক্রিকেটারদের সম্বর্ধনা দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনার চেয়ে বড় কিছু আর হতে পারেনা। মূলত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা আসার পর বিসিবির উদযাপনও নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এরপরও লালসবুজ পতাকার রঙে সাজানো হয় একটি বাস। সেটিকে বড় হরফে লেখা হয় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস। বিমান বন্দরের বিশৃংখল পর্ব শেষে সেই বাসেই চড়ে বসে যুবা টিম টাইগার্স। এরপর বিমান বন্দরের বাইরের জনস্রোত, বিমান বন্দর থেকে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট গ্রাউন্ড পর্যন্ত উল্লাসমুখর জনতার জনস্রোত, মোটর সাইকেল র্যালি এসব আনন্দ শোভাযাত্রায় ভালোলাগার পাশাপাশি ভয়ও করেছে! কারন বাংলাদেশে এখন প্রায় ধরা পড়ে জঙ্গি। এরা মূলত এমন আনন্দ উৎসবে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে ওৎ পেতে থাকে। সৌভাগ্য তেমন কিছু ঘটেনি।
এখন বিমান বন্দর থেকে শুরু করে নানান বিশৃংখলার ভয় নিয়ে বলি। জনবহুল পরিবেশে বাংলাদেশে এখন জঙ্গি হামলার ভয় থাকে। দেশের সবচেয়ে বড় বিমান বন্দর একটি নিয়ন্ত্রিত এলাকা। সেখানে কে কোথায় দাঁড়াতে পারবেন থাকতে পারবেন সেটি নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষেরই। কিন্তু টিভির লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে তারা এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত বিমান বন্দরের কর্মীদের মাধ্যমেই সেখানে একটি বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে এখন অনেক মিডিয়া। বিমান বন্দরে শুধু মিডিয়া কর্মীই ছিলেন দুই শতাধিক। বাংলাদেশের এই মিডিয়া কর্মীরা বিদেশেও যান। সাংবাদিক-মিডিয়া কর্মীরা কোথায় কিভাবে দাঁড়াতে পারেন, কিভাবে কাজ করতে পারেন এটা এই মিডিয়া কর্মীরা বিদেশ গেলে মেনে চলেন বা মেনে চলতে বাধ্য থাকেন। কিন্তু দেশে তারা এটি মানবেননা কেনো। মিডিয়া কর্মীদের সুশৃংখল রাখার দায়িত্বটিও ছিল বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের। এই দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছেন অথবা ভয় পেয়েছেন। সবার মনে রাখা উচিত একটি সুশৃংখল পরিবেশই একটি নিরাপদ পরিবেশ। বিশৃংখল পরিবেশের সুযোগে অনাকাংখিত কোন ঘটনা ঘটলে কিন্তু কর্তৃক্ষকেই সবাই দুষতেন।
অভিনন্দন বিশ্বকাপ বিজয়ী বাংলাদেশ অনুর্ধ উনিশ দল। অভিনন্দন প্রিয় প্রজন্ম। অভিনন্দন বাংলাদেশ। জয় বাংলা। প্রিয় প্রজন্মদের এই বিজয় মুজিব বর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা