অনলাইন ডেস্ক
অন্যদিকে বাঘ ও সুন্দরবন রক্ষায় সরকারকে আরও বেশি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুন্দরবন বিশেষজ্ঞরা।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে করা একটি জরিপের ফলাফলে বর্তমানে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে। ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে পরিচালিত জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১০৬টি।
এর আগে ২০০৪ সালের জরিপের তথ্যানুযায়ী ৪৪০টি বাঘ ছিল। এর মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ৮৯টি পুরুষ ও ১৭০টি স্ত্রী বাঘ এবং ১২টি বাচ্চা বাঘ রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় ৩২টি পুরুষ ও ১২৮টি স্ত্রী বাঘ এবং ৯টি বাচ্চা বাঘের অবস্থান জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল। মাত্র ১৪ বছরে ৩২৬টি বাঘ কমে যাওয়া বা মারা যাওয়াকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে সচেতন মহল।
এভাবে চলতে থাকলে একসময় সুন্দরবনের বাঘ বিলুপ্ত হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনের বাঘের মৃত্যুর জন্য ৯টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো- প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস), লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়া, মিঠাপানির অভাব, খাদ্য সংকট, বন ধ্বংস, বাঘের আবাসস্থল অভাব, চোরাশিকারি, অপরিকল্পিত পর্যটন ও বনের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল। এর সঙ্গে বাঘ রক্ষায় আবাসস্থল সংরক্ষণ, বনের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের বিকাশ, বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধসহ নানা সুপারিশ করেছেন তারা।
সুন্দরবনের বন্যপ্রানী ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আশঙ্কাজনক হারে সুন্দরবনে বাঘ কমেছে। এটা বাঘের জন্য এক ধরনের হুমকি। তবে বাঘ ও সুন্দরবনের বন্য প্রাণী রক্ষায় সরকার সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ বনভূমিকে অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের যে শর্ত তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে বাঘও সাবলীল বিচরণ করতে পারবে। আর সাবলীল বিচরণের ফলে বাঘের প্রজনন বাড়বে। প্রজনন বাড়লে বাঘও বাড়বে। বিলুপ্তি হাত থেকে রক্ষা পাবে সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. এসকে আমির হোসেন বলেন, বাঘ খুবই অলস প্রকৃতির একটা প্রাণী। প্রচণ্ড ক্ষুধা না লাগলে তারা লোকালয়ে আসে না। আর লোকালয়ে আসার ফলে অনেক বাঘের মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে গহীন বনে বাঘের খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। যেসব অভয়াশ্রমগুলো রয়েছে সেখানের নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে মানতে হবে। বন বিভাগ, সরকার ও সংশ্লিষ্টদের তত্ত্বাবধায়নে কুমির ও হরিণের মতো বাঘের জন্যও প্রজনন কেন্দ্র করা যেতে পারে। সেখানে বাঘের প্রজনন ঘটানোর চেষ্টা করতে হবে। সফল হলে সেই বাঘের বাচ্চাকে একটি নির্দিষ্ট সময় লালন-পালন করে আবারও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ছেড়ে দেওয়া যাবে। এছাড়াও সুন্দরবনে মানুষের আধিপত্য কমাতে হবে। মানুষের আধিপত্য কমালে শুধু বাঘ নয়, সুন্দরবনের প্রতিটি প্রাণী বেড়ে উঠবে, আপন গতিতে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বিশ্ব বাঘদিবসে আমরা প্রতিবছর নানা আয়োজন করে থাকি। গেল বছরও সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতে এবার আমরা কোনো কর্মসূচি রাখি নেই। তবে বাঘ রক্ষায় নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে শুধুমাত্র ভার্চুয়াল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে বাঘদিবসের কার্যক্রম। তবে বাঘ রক্ষায় সরকার ও বন বিভাগ খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ বনভূমিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছি। স্মার্ট পেট্রোলিং নানা উদ্যোগে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কমেছে। বাঘ রক্ষায় জনসচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম রয়েছে বন বিভাগের। বাঘের জন্য যেসব হুমকি রয়েছে আমরা সেগুলোকে রিডিউস করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, বন বিভাগের সব কার্যক্রম চলমান থাকলে বাঘ রক্ষায় আমরা সফল হবো।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা