ইউনিসেফের এক নতুন প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রতি ৩ জন কিশোরীর প্রায় ১ জন কখনোই স্কুলে যায়নি। সোমবার ( ২০ জানুয়ারি) ইউনিসেফ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ বলেছে, আজ সোমবার যখন শিক্ষামন্ত্রীরা ‘বিশ্ব শিক্ষা ফোরামে’ জড়ো হয়েছেন এবং যখন নেতৃবৃন্দ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় সমবেত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে প্রতিবন্ধকতাগুলো দরিদ্রতম শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে অব্যাহতভাবে বিরত রেখেছে সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে – দারিদ্র্য, লিঙ্গবৈষম্য, শারীরিক অসামর্থ্যতা, জাতিগত পরিচয় বা ভাষাগত কারণে বৈষম্য, স্কুল থেকে তাদের অবস্থানগত দূরত্ব এবং দুর্বল অবকাঠামো। শিক্ষার প্রতিটি ধাপে বাধা দারিদ্র্যকে স্থায়ী করে এবং এটি বৈশ্বিক শিক্ষা সংকটের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি।
দরিদ্রতম শিশুদের শিক্ষার পেছনে আরও অর্থের যোগান দেওয়া একটি জরুরি প্রয়োজন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সরকারি শিক্ষা ব্যয় বণ্টনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। তহবিলের সীমাবদ্ধতা এবং এর অসম বণ্টনের ফল হচ্ছে বিদ্যালয়ে বড় আকৃতির শ্রেণি, নিম্ন মানের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণের অভাব এবং স্কুলগুলোর দুর্বল অবকাঠামো। এটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী উপস্থিতি, স্কুলে ভর্তি এবং শেখার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, সর্বত্র দেশগুলো বিশ্বের দরিদ্রতম শিশুদের ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আর এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা ব্যয় অসম অনুপাতে ধনী পরিবারের শিশুদের পেছনে যেতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির দারিদ্র্য থেকে মুক্তিলাভ, বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখা এবং তাদের নিজের দেশের ‘অর্থনীতিতে’ অবদান রাখার আশা খুবই সামান্য।“
৪২টি দেশের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের শিশুদের শিক্ষার জন্য শিক্ষা তহবিলের যে অর্থ ব্যয় হয়, তার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয় সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ পরিবারের শিশুদের শিক্ষার জন্য।
আফ্রিকা জুড়ে দশটি দেশে শিক্ষা খাতে ব্যয়ে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য পাওয়া গেছে, যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের তুলনায় সবচেয়ে ধনী পরিবারের শিশুদের শিক্ষার জন্য চারগুণ বেশি অর্থব্যয় হয়।গিনি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র হচ্ছে এমন দুটি দেশ যেখানে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সরকারি শিক্ষা তহবিলের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই দুইদেশে সবচেয়ে ধনী পরিবারে শিশুরা সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের তুলনায় যথাক্রমে ৯ ও ৬ গুণ বেশি সুবিধা পায়।
বাংলাদেশে পাবলিক শিক্ষার অর্থ দরিদ্র পরিবারের শিশু ও ধনী পরিবারের শিশুর জন্যে ব্যয়ের হার যথাক্রমে ১৫ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ।
এই বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল বার্বাডোস, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনেই ধনী ও দরিদ্রতম শ্রেণির মাঝে শিক্ষা তহবিল সমানভাবে বণ্টন করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দরিদ্রতম শিশুদের জন্য থাকা সম্পদের সীমাবদ্ধতা শিক্ষাক্ষেত্রে এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, কেননা এ কারণে স্কুলগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যঅনুযায়ী, নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশে বসবাসকারী অর্ধেকেরও বেশি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পরও একটি সাধারণ গল্প পড়তে বা বুঝতে পারে না।
প্রতিবেদনে সরকারগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:
• অভ্যন্তরীণ সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে তহবিল এমনভাবে বণ্টন করতে হবে যাতে দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের শিশুরা শিক্ষা তহবিলের কমপক্ষে ২০ শতাংশ থেকে উপকৃত হয়। • শিক্ষার নিম্নস্তরের জন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দে অগ্রাধিকার প্রদান করা, যে স্তরে দরিদ্রতম পরিবারের শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব করে এবং নিম্নস্তরে বরাদ্দ যখন সবার জন্য প্রায় সমান হয়ে যাবে তখন ধীরে ধীরে উচ্চ স্তরে বরাদ্দ বাড়ানো। • প্রতিটি শিশুকে অন্তত এক বছরের জন্য সর্বজনীন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সেই ভিত্তি যার ওপর পড়াশোনার প্রতিটি পর্যায় নির্ভরশীল। যেসব শিশু প্রাক-প্রাথমিক শেষ করে তারা শেখে ভাল, তাদের স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর তাদের অর্থনীতি ও সমাজে অবদান রাখার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জাতীয় শিক্ষা বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হলে তা এ ক্ষেত্রে সবার জন্য সুযোগ তৈরিতে সহায়ক হবে। ফোর বলেন, “আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছি। আমরা যদি শিশুদের শিক্ষায় বিচক্ষণতার সঙ্গে ও সমতাভিত্তিক বিনিয়োগ করি, তাহলে শিশুদের সুযোগ পেতে ও নিজেদের জন্যে সুযোগ তৈরি করতে তাঁদের যে দক্ষতা গুলো প্রয়োজন সেগুলোর দ্বারা তাঁদের ক্ষমতায়নের মধ্যমে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা