ডাকসুর ভিপি ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা
নাগরিক নিরাপত্তা জোট ও মানবাধিকার ফোরাম বাংলাদেশের সদস্য সংগঠনসমূহের শীর্ষ প্রতিনিধিবৃন্দসহ দেশের মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক অধিকার কর্মী ও অন্য বিশিষ্টজনেরা ডাকসুর ভিপি ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সোমবার ( ২৩ ডিসেম্বর) নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
এতে স্বাক্ষর করেছেন অ্যাড. সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন, খুশী কবির, বিচারপতি (অব.) নিজামুল হক নাসিম, অ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত, অ্যাড. তবারক হোসেইন, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শাহীন আনাম, জাকির হোসেন, অ্যাড. জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, শীপা হাফিজা, শামসুল হুদা, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, রঞ্জন কর্মকার, সালেহ আহমেদ, শরীফ জামিল, রীতা দাশ রায়, রোকেয়া রফিক, শিরিন হক, সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন।
স্বাক্ষরকারীগণ বিশ্বিবিদ্যালয় অঙ্গনে ন্যাক্কারজনক এই পরিস্থিতি প্রতিরোধে উপাচার্যসহ বিশ্বিবদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে দৃশ্যমান ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।
”রবিবার (২২ ডিসেম্বর)দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডাকসু ভবনে ডাকসু ভিপি নুরুল হক ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা চালায় একটি প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে নুরুল হকসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত ২৪ জন আহত হন বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনার সময় হামলাকারীরা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন। কয়েক দফা বেধড়ক মারধরের শিকার আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন ফারাবীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন সেই প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের বুয়েট শাখার একদল নেতা-কর্মী। আবরার হত্যার সেই ভয়াবহ স্মৃতি মানুষের মনকে বিক্ষুব্ধ করে। সেই ভয়াবহ ঘটনা বিস্মৃত হওয়ার আগেই ছাত্রসংগঠনটির কথিত নেতাকর্মীদের দ্বারা আরেকটি বর্বর হামলার ঘটনা ঘটল।
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, দেশে ভিন্ন মতের মানুষদের ওপর নির্যাতন ও হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দ্বারা সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষ নির্যাতিত হচ্ছেন। অথচ কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ধরণের নিষ্ঠুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে যেসব বর্বর হামলার ঘটনা ঘটছে তাতে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে যে ক্ষতগুলো তৈরি হয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে আমরা মনে করি। এই ঘটনাগুলো বন্ধের জন্য কেবল একটি ঘোষণা বা বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ যথেষ্ট নয়। এই ক্ষত নিরাময়ের জন্য ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি।
সংবাদপত্রের তথ্যমতে ডাকসুর ভিপি হওয়ার আগে এবং পরে ৯ বার ঐ প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন নুরুল হক ও তার সহযোগীরা। এর মধ্যে পাঁচবার হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও তৎসংলগ্ন এলাকায়। কিন্তু হামলাকারী ঐ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে এ ধরণের বর্বর ঘটনার পুণরাবৃত্তি বন্ধ করা যেত বলে আমরা মনে করি। গতকালের ঘটনার প্রেক্ষিতে গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রক্টর ও উপাচার্যের দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য হতাশাজনক ও বিব্রতকর। দেশবাসী এধরণের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীলতার দৃষ্টান্ত দেখতে চায়।
ভিন্নমতের ওপর কঠোর হওয়া এবং হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় জানমালের ক্ষতির শিকার হয় সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষ। এ ধরণের ঘটনার পুণরাবৃত্তি তাদের প্রান্তিকতর অবস্থানে ঠেলে দেয়। আমরা গতকালের এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে এ ঘটনার জন্য কারা দায়ী তা চিহ্নিত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।”
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা