দেশে বিনিয়োগের চেয়ে পাচার অনেক সহজ ও লাভজনক হওয়ায় সে পথই হাঁটছেন অনেক বিত্তশালী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে। বিএফআইইউ এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই সব দেশে সেকেন্ড হোম করার জন্য ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা ছাড়াও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং ব্যাংক হিসাবও পরিচালনা করা হচ্ছে পাচারের অর্থে।
সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, গত বছর বাংলাদেশিরা পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ রেখেছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। বিপুল এই অর্থপাচার সরকারের মাঝে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। এ উদ্বেগ আরো বেড়েছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) একটি প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে। এপিজির পরিচালক ডেভিড শ্যানন ও মোস্তফা আকবর আজ এবং আগামীকাল সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থপাচারের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বৈঠকে বসবে। প্রতিনিধিদলটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপরই বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থপাচার কোন তালিকায় থাকবে তা নির্ভর করছে। তবে এসব অর্থপাচার রোধে সরকার একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছে, যা আজকের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থপাচার রোধে জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মানি লন্ডারিং এবং অর্থপাচারের বিভিন্ন তথ্য আমরা পেয়েছি। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, অ্যাকশনে যাচ্ছি। ব্যবসার নামে যাঁরা বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করেছেন তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। সব কিছুই মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। সীমান্তে যেসব অর্থপাচার হচ্ছে সেগুলো নিয়েও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি।’
বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশন নিয়ে আলোচনা হবে। এপিজির প্রতিনিধিদল থাকবে। আমরা একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছি। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমরা এখন আর ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় নেই। এটিকে আরো এক ধাপ ওপরে নিতে আমরা কাজ করছি।’
সূত্র মতে, দেশের ভেতরে বেসরকারি বিনিয়োগ একই বৃত্তে আটকে আছে অনেক বছর। এর মধ্যে আবার ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বাড়ছে অর্থপাচারের ঘটনা। এ বিষয়ে এপিজির প্রতিনিধিদলটি সরকারকে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে পারে। বিশেষ করে সরকারের পদক্ষেপ এবং অর্থপাচার রোধের পরিকল্পনা জানতে চাইবে সংস্থাটি। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশের মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়েও প্রশ্ন রাখবে প্রতিনিধিদলটি। আগামী বছর এপিজির বৈঠকে এ রিপোর্ট তুলে ধরা হবে। এরপর বাংলাদেশের অবস্থান জানা যাবে।
প্রতিনিধিদলটির মূল্যায়ন ভালো করতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আজ অনুষ্ঠেয় মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে একটি কৌশলপত্র তুলে ধরা হবে। এতে আগামী কয়েক বছরের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে যে কৌশলপত্র উপস্থাপন করা হবে তাতে দেখা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের নিয়ে কাজ করবে। হুন্ডি কিংবা ব্যাংকের মাধ্যমে সহজেই যাতে অর্থপাচার করা না যায় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষত বিএফআইইউ কাজ করবে। বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর ও ব্যাংক ব্যালান্স বা দ্বৈত নাগরিকদের আয় দেখার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া বৈঠকে এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও সমস্যা সমাধানে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
সূত্র মতে, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ছাড়াও প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা