ফজলুল বারী
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারনা দেখে বেশ উৎসাহবোধ করেছিলাম। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পিছনে এত বিশাল অংকের নেতাকর্মী! নির্বাচনী আচরনবিধির কারনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের তারকা নেতাদের কেউ নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিতে পারেনি! বাংলাদেশে অবাক এই নিয়ম! আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বে দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারনায় দুটি কমিটি করেছিল শাসকদল। কিন্তু বিএনপির আপত্তি আর নির্বাচন কমিশনের ধমকে এই দুটি কমিটি কোন কাজ করতে পারেনি। দুই প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আর শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে সে রকম কোন নেতিবাচক ইমেজ বা প্রচারনা ছিলোনা। তাদের পিছনেই কাজ করেছে ঐক্যবদ্ধ নগর আওয়ামী লীগ কাজ করেছে।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীদের পিছনে এর প্রায় সব নেতা যেমন নেমেছেন, তেমনি বিপুল মানুষ দেখে খুশি খুশি মির্জা ফখরুলও বলেছেন, নেতাকর্মীরা যে মাঠে নামতে পেরেছে এতেই তারা খুশি। বিএনপির পিছনে এতো মানুষ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত সরকারি নেতারা বলেছেন, সারাদেশ থেকে সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের ঢাকায় জড়ো করছে বিএনপি! অথচ বিএনপির এখন সেই সামর্থ্য অথবা বাস্তবতাও নেই। মুজিববর্ষের ব্যানারে এক রকম আচরনবিধি ভঙ্গ করে প্রচারনার শেষদিনে একটি শোডাউন মিছিলও করে ফেলেছে সরকারি দল। আচরনভঙ্গের কথা বলে এর নিন্দা করে নির্বাচন কমিশনে নালিশ করেছে। কিন্তু সরকারি দলের কৌশল মোকাবেলা করে পেরে উঠতে পারেনি। ভোটের দিন দেখা গেলো যথারীতি ছেঁড়াবেরা এক বিশৃংখল বিএনপি!
ভোটের আগে বিএনপি বলেছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের আস্থা নেই, তবু খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসাবে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার নির্বাচিত হলে ঢাকাকে এই করবো সেই করবো জাতীয় অঙ্গীকার করছিলেন বিএনপির দুই প্রার্থী! এই স্ববিরোধিতাকে আমল দেননি ভোটাররা। নগর মেয়র যদি সরকারি দলের হয় তারা কিছুটা হলেও কাজ করতে পারেন। বিরোধীদলের মেয়রও কাজ করতে পারেন, তবে তা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে। যেমন কাজ করছেন সিলেট, কুমিল্লার বিএনপি দলীয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টির মেয়র। বিএনপির ঢাকার দুই সিটিতে চমৎকার দু’জন তরুনকে প্রার্থী করেছিল। তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে বাঁশের কেল্লাকে অর্থায়ন, ইশরাকের সঙ্গে শিবিরের গোপন সম্পর্কের অভিযোগ স্বত্ত্বেও ভোটের মাঠে তারা বেশ সাড়া ফেলে দেন। কিন্তু দিন শেষে তারা যে সাফল্য মুঠোয় আনতে পারেননি এর মূলে কৌশলের ভুল, দলীয় বিশৃংখলা।
বিএনপি বলেছিল তারা ভোটে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্যে আলাদা আলাদা সেট পোলিং এজেন্ট রাখবে। এক সেট বাধা পেলে বা ভোট কেন্দ্রে থাকতে না পারলে দেবে আরেক সেট। কথাবার্তার ধরন দেখে মনে হচ্ছিল বিএনপি এবার অনেক গোছানো এবং পরিকল্পিত! কিন্তু ভোটের দিন দেখা গেলো সব ঘোড়ার ডিম! সেই একই স্টাইলের অভিযোগ! মেরেছে, বকেছে, বের করে দিয়েছে! যদি মেরে থাকে বকে থাকে বা বের করে দিয়ে থাকে তাহলে আপনাদের আরেক সেট কোথায়? কার্যত ভোটের দিন বিএনপির অনেক পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে আসেনইনি। তারা হয়তো ভয়ে আসেননি, অথবা আসেননি প্রতিপক্ষের টাকার প্রলোভনে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনটাই ফেরেস্তাদের দল নয়। স্বার্থের জন্যে এর লোকবল সবকিছু করতে পারে।
ইশরাক বলেছিলেন প্রয়োজনে তিনি জীবন দেবেন, তবু বিনা যুদ্ধে মাঠ ছেড়ে যাবেননা। জীবন দেবার ঘোষনাটি আমার খুব শঠতাপূর্ন ধান্ধাবাজির মনে হয়। কেউ কোথাও জীবন দেয়না। নিঃস্বার্থ জীবন দিতে যায়না। বাংলাদেশের মানুষ একবারই নিঃস্বার্থ জীবন দিতে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। কোন স্বার্থ-ধান্ধা মাথায় নিয়ে কেউ অন্তত দেশের জন্যে মরতে যায়না অথবা যেতে পারেনা। আরেকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে গণতন্ত্রের মুক্তি আর স্বৈরাচার নিপাত যাবে এই আশায় বুকেপিঠে পোস্টার লিখে মিছিলে এসে প্রান দিয়েছিলেন! তিনি শহীদ নূর হোসেন। আর যারা ধান্ধার জন্যে মরবেন বলেন তারা আসলে ভন্ড। গোপীবাগের ঘটনার দিন দেখা গেছে ইশরাক কী রকম মরার পাট্টি! এরজন্যে কোন কিছুর জন্যে যারা মরতে বলেন তাদের নিবৃত্ত করে বলি, বেঁচে থাকুন বাপু, মরে গেলে এটা করবেন কি করে?
ভোটের দিন বিএনপির প্রার্থীরা প্রথম ধাক্কা খান ভোটকেন্দ্রের চেহারা-পরিস্থিতি দেখে। ভোটারের অভাবে খা খা করছিল সব ভোটকেন্দ্র। বিএনপির এত নেতাকর্মী-সমর্থক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছে। তারা যদি ভোট দিতে কেন্দ্রে না আসে তাহলেতো ফলাফল অশ্বডিম্ব! এই ভোটার-সমর্থকদের নিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে বিএনপি? এই দলটির দরকার জরুরি আত্মসমালোচনা। সবাইকে বারবার যে কথাটি বলি তাহলো মানুষ পথে নামলে কিন্তু কেউ কাউকে দাবায়ে রাখতে পারেনা। কোটা আন্দোলন তাদের ঘুষের চাকরির নিশ্চয়তায় সরকারকে বাধ্য করেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের কাছে নতজানু হয়েছে সরকার। শাহজাহান খান, মশিউর রহমান রাঙ্গা নামের দুই পরিবহন মাফিয়াকে বাদ দেয়া হয়েছে মন্ত্রিসভা থেকে।
আর ছেঁড়াবেড়া দল বিএনপির আরেক নাম এখন অভিযোগ পাট্টি! এরা নিজেদের ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে পারেনা আবার নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের আবদার করে! ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে স্বল্প ভোটার উপস্থিতি যেমন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে তেমনি উন্মোচন করেছে বিএনপির সামর্থ্য। বিএনপি আবার ‘আউরি খাইয়া পথ ফাউরি লাইছে’। মানুষ কোন দিকহারা দলকে বিকল্প ভাবেনা। তাদের কাছে সে তুলনায় শেখ হাসিনা অনেক ভালো। কারন তাঁর কাজ-সাহস-সততা নিয়ে কারও কোন প্রশ্ন-সন্দেহ নেই। বিদেশি দূত যাদেরকে রাজা মনে করেছিল প্রজা বিএনপি তারাও তাদের টেনে তুলতে পারেনি। বিদেশিদের রাজা ভেবে বিএনপির প্রজাগিরিকেও ভোটাররা পছন্দ করেনি। আসল রাজা দেশের মানুষ। বিএনপিকে দিক খুঁজে পেতে মক্কা ঠিক করতে হবে জনগনকে, লন্ডন বা ওয়াশিংটনে নয়। আর ডক্টর কামাল বা ঐক্যফ্রন্টের কোন পরিত্যক্ত নেতা দেশের মানুষের কাছে শেখ হাসিনার বিকল্প নেতা নন। অতএব পথ পেতে আগে নিজেদের একজন নতুন নেতা খোঁজো বিএনপি।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা