অনলাইন ডেস্ক
শুক্রবার (৪ জুন) ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এমন অভিমত দেয়া হয়। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সিপিডির পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য তুলে ধরার সময় ‘সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোটার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই’ উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বলা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাব। কিন্তু এখানে কী ধরনের সংস্কার দরকার, কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার এবং কীভাবে করবো, সেটার কোনো সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা বাজেটে নেই।’
তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজটে কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও চিন্তার স্বচ্ছতা ছিল না। এই বছরে আমরা দেখলাম কোভিড ব্যবস্থানা নিয়ে বাজেট ডকুমেন্টে চিন্তার একটা স্বচ্ছতা রয়েছে। কিন্তু সেই চিন্তার স্বচ্ছতার সঙ্গে বরাদ্দ কিংবা পদক্ষেপের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে যদিও অনেক কিছু বলা হয়েছে এবং বলা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার একটি বাজেট। সেই ধরনের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখেছি না। স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান এই তিনটিকে এডিপিতে প্রাধিকার দেয়া কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সেই প্রাধিকারটা আমরা বরাদ্দের ক্ষেত্রে দেখছি না।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটের কাঠামোগত যে দুর্বলতার কথা আমরা বলছি, দেখেন তিনি ২০২১-এর রিভাইজড যে বাজেটটা ছিল সেটার ওপর বেসিস করে প্রবৃদ্ধিগুলো করেছেন। রফতানি, আমদানি, রাজস্ব আয়, সরকারি ব্যয়, এগুলো যদি আমি প্রথম ১০ মাসের হিসেবে, বাকি দুই মাসে আর কতো করতে পারেন, সেটা যদি দেখি ওই রিভাইজড বাজেটের থেকে কম হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে সবাইকে টিকাদান, অন্যদিকে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে; তা পুষিয়ে আনার জন্য আগামী ৩-৫ বছর ধরে আমরা কী ধরনের কাজ করবো, তার একটি মধ্যমেয়াদী পরিস্কার নীতিমালা থাকা দরকার ছিল। এই যে ৫০তম বাজেটে দেয়া হলো- জীবন ও জীবিকার প্রাধিকার দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব, সেটাকে বাস্তবায়নের কোনো সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা দেখতে পারছি না।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাস্তব, অবাস্তব শব্দগুলো অর্থনীতিবিদদের না। একটা বাজেট তৈরি করা হয়েছে, তাদের কিছু অনুমিতি ছিল। আমরা বলছি- সেই অনুমিতিগুলো দুর্বল। আমরা বলছি- স্বস্তির একটা জায়গা থেকে বাজেটটা তৈরি করার একটা সুযোগ তারা পেয়েছিলেন, তার কারণ অর্থনীতির সামষ্টিক যে সূচকগুলো আছে- মূল্যস্ফিতি, খাদ্য নিরাপত্তা, রিজার্ভ আমাদের ভালো আছে। মুদ্রার বিনিময় খুব ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে বা তারা যেটা বলছেন, তার থেকে বাস্তব অবস্থার প্রবৃদ্ধি আরও অনেক বেশি আমাদের করতে হবে। সেটা করতে গেলে যে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, সক্ষমতা দরকার, সেটা কিন্তু আমরা গত কয়েক বছরে দেখিনি। এ বছর এই করোনার মধ্যে সেটা হয়ে যাবে, সেটাও আমরা মনে করি না। সুতরাং সেদিক থেকে আমরা বলছি- একটা কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বাজেটটা পেশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যাবে যে অনুমিতিগুলো করা হয়েছে, সেই অনুমিতিগুলো ঠিক ছিল না।’
একই ধরনের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় যখন বাজেটটা তৈরি করেছে, তখন তার অর্থনীতির সামষ্টিক কাঠামো সম্পর্কে মনোভঙ্গী কী, সেটা বোঝার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু উনি এই বাজেট তৈরি করেছেন। আমরা বলছি- উনার মনোভঙ্গীর সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন নয় মাস পর্যন্ত ব্যক্তিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আছে ৯ শতাংশের নিচে। এই বছরের জন্য উনার সংশোধিত যে প্রজেকশন সেটা হল ১৪ শতাংশের মতো। এটা তো আমরা সবাই জানি হবে না। আমার ধারণা অর্থমন্ত্রণালয় এটা খুব সিরিয়াসলি তৈরি করেনি। সুতরাং এটা আমরা সিরিয়াসলি নেব না। এই জন্য আমরা বলছি- বাজেটটা যখন তৈরি করা হয়েছে, অনুমিতিগুলো খুব সিরিয়াসলি অর্থমন্ত্রণালয় চিন্তা করে করেছেন কি-না, সেটা নিয়ে আমাদের সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এটা হলো আমাদের চিন্তার জায়গা। কারণ বাস্তব পরিস্থিতিটাকে সিরিয়াসলি নিয়েই বাজেটটা তৈরি হবে, এটাই আমাদের কাম্য ছিল।
ব্রিফিংয়ে সিপিডির অভিমত তুলে ধরার সময় ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নতুন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না থাকলেও বিশেষভাবে ভবন নির্মাণ, বন্ড, রফতানি এলাকা, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ এসআরও মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। আমরা মনে করি এটা বন্ধ করা যেতে পারে। কারণ এ ধরনের সুযোগের ফলে বৈষম্য তৈরি হয়।’
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কেউ অপ্রদর্শিত টাকা তার প্রযোজ্য যে কর তার সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমনা দিয়ে সাদা করতে পারেন। এছাড়া আমাদের যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে বা বন্ড আছে, সেখানে ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করে নিতে পারেন। আর গত বছর ফ্লাট, ব্যাংকে থাকা অপ্রদর্শিত টাকা ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। প্রথম দু’টি কিন্তু আছে।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা