মার্কিন ড্রোন হানায় ইরানি কম্যান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শনিবার বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের সামনে ফের রকেট হামলা হল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জন আহত বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা যায়, বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের কাছে দুটি রকেট ছোড়া হয়েছে। এছাড়া বাগদাদের উত্তরে সালাহউদ্দীন প্রদেশে মার্কিন সেনাদের বালাদ বিমানঘাঁটিতে তিনটি রকেট ছোড়া হয়েছে। একযোগে এসব রকেট ছোড়া হয়। হামলায় কেউ নিহত হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাসেম সোলেমানিকে হত্যায় মধ্যপ্রাচ্যে ফের যুদ্ধের দামামা বাজবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সমর বিশেষজ্ঞরা। বাগদাদে এদিনের রকেট হামলার প্রেক্ষিতে তারই সূচনা হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে এমনিতেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রচণ্ড সংঘাতে উত্তপ্ত সিরিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিন। এর মধ্যে ইরানের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি, সেনা কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানি ও ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনীর শীর্ষ নেতা আবু মাহদি আল মুহানদিসের হত্যা সেই উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডি পেরিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের দেড় দশক পর ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও দেশটি ফের আঞ্চলিক সংঘাতের কেন্দ্রে চলে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সোলেমানির হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র মুহূর্তে পালটে গিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ট্রাম্পকে স্বস্তি দিলেও, মধ্যপ্রাচ্যে রক্ত ঝরাবে।
সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার অভিযোগ তুলেছেন, তেহরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া বাহিনী ইরাকে মার্কিন সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালাচ্ছে। ২০১৯-এর ২৭ ডিসেম্বর রকেট হামলায় উত্তর ইরাকে কর্মরত এক মার্কিন ঠিকাদার নিহত হন। ওই হামলা ইরানপন্থীদের ‘কাজ’ বলে হাশদ আস সাবির কয়েকটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে ২৫ যোদ্ধাকে হত্যা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষুব্ধ হাশদ সমর্থকরা বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায়।
দূতাবাস হামলার জন্যও তেহরানকে দোষারোপ করে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’ হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরই ট্রাম্পের নির্দেশে ড্রোন হামলায় কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করা হল। শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ পথে সোলেমানি ও তার শীর্ষ উপদেষ্টা ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনী হাশদ আস সাবি ফোর্সের প্রধান আবু মাহদি আল মুহানদিসের কনভয়ে হামলা চালায় মার্কিন বিমানবাহিনী।
হামলার পরই ট্যুইট করে মার্কিন জাতীয় পতাকার ছবি পোস্ট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলার দায় স্বীকার করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। যদিও সোলেমানি হত্যায় মার্কিন কংগ্রেস এখন বিভক্ত। ট্রাম্পের মিত্র রিপাবলিকানরা এ পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেছে, এতে করে ইরানকে কঠিন বার্তা দেয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, যে হাতে মার্কিনিদের রক্ত ঝরেছে, তার মৃত্যু ইরানি শাসনের ওপর একটি বড় আঘাত।
ডেমোক্র্যাটরা সমালোচনা করে বলেছেন, ট্রাম্পের ঔদ্ধত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আর একটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমেরিকাকে। তাঁরা মনে করছেন, এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘ট্রাম্পের এমন বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত আমাদের আর একটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। খরচ হবে কোটি কোটি ডলার।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাঁদের দাবি, হামলা চালানোর আগে কংগ্রেসের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, ‘সোলেমানি নিঃসন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কি কোনও অনুমতি নিয়ে হামলা চালিয়েছে? ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তির উপর এমন হামলায় আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা অনেক বেশি।’
গত কয়েক মাস ধরে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে বিপজ্জনক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরানের শীর্ষ সামরিক ব্যক্তিত্বের হত্যাকাণ্ডে সেই উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। সোলেমানির হত্যায় ইতিমধ্যে প্রতিশোধের হুংকার দিয়েছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হুঁশিয়ারি, ‘ভয়াবহ প্রতিশোধ’ নেয়া হবে বলে। ইন্ডিয়া টাইমস।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা