ফজলুল বারী : বাংলাদেশে করোনার চাইতেও বড় দুর্যোগ এখন সমাজে কিছু শয়তান লোকজন দিব্যি মানুষের চেহারা নিয়ে হাঁটে! এই মতলবিরা দেশজুড়ে করোনা উদ্বেগ ছড়িয়ে দেবার বিশেষ মিশন নিয়েছে। কেউ এরজন্য ফেসবুককে কাজে লাগাচ্ছে। কেউ ব্যবহার করেছে নিজের পত্রিকা বা কিছু টিভি অনুষ্ঠানকে। প্লিজ এসব করবেননা। এদের বাড়তে দেবেননা। করোনা আপনাদের চিন্তামতো বাংলাদেশে ছড়াবেনা। শকুনের দোয়ায় কিন্তু গরু মরেনা। করোনা বাংলাদেশে কেনো ছড়াবেনা তা এখানে ব্যাখ্যা করে বলবো। এই লোকজন দেশে কেনো আতঙ্ক ছড়াতে চায় তা লোকজন বুঝে। দেশের মানুষ হাতে হাত রেখে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে দেখে এদের মন খারাপ। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মতো সংগঠনতো আগে এভাবে বাংলাদেশ দেখেনি।
সেনাবাহিনী সহ বেসামরিক প্রশাসন চমৎকার ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে দেখে ইনাদের মন খারাপ। বিপদে বাংলাদেশ সচরাচর যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয় এবারেও হয়েছে। এবং বাংলাদেশের এই প্রধানমন্ত্রীর নাম শেখ হাসিনা। ইনি সর্বক্ষন সক্রিয়। এমন ভয়ডরহীন সাহসী নেতৃত্ব পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন নেই। কাজেই বাংলাদেশ যেমন এই দুর্যোগ সামাল দেবে, বাংলাদেশ যেভাবে সামাল দিচ্ছে তা দেখে ইনাদের হতাশ হওয়া ছাড়া গতি নেই। কাজেই শয়তানিতে সময় নষ্ট না করে কিভাবে নিজের পত্রিকার সাংবাদিকদের বেতন দেবেন সে টেনশন করুন। সাংবাদিকদের কত বেতন দেন, কতোটা অনিয়মিত দেন তাতো জানেন। বেতন না দেবার অজুহাত সৃষ্টি করবেননা। কেউ কোন অজুহাত মানবেননা।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের লোকজন এই মূহুর্তে কেনো ঢাকা ছেড়ে গেলো এ কথা বলে উদ্বেগ ছড়ানো হচ্ছে! মার্কিন দূতাবাস ইনাদের কাছে মক্কার মতো গুরুত্বপূর্ন হতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটন কখনোই মক্কা নয়। ওয়াশিংটনও বাংলাদেশের জন্যে এখন অত গুরুত্বপূর্ন নয়। বাংলাদেশের এই প্রধানমন্ত্রী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নাক গলাতে এপোয়েন্টমেন্টই দেননা। পদ্মা সেতুও বাংলাদেশ নিজের টাকায় করছে।
এই পরিস্থিতিতে এমনিতে দূতাবাসগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্মও নেই। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে একই পরিস্থিতি। এই সময়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কূটনীতিকরা যার যার পরিবারের সঙ্গে মিলে দুর্যোগ সামাল দিতে যার যার দেশে গেছেন। আর বাংলাদেশ থেকে যারা গেছেন তাদের দলে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অনেক মার্কিন নাগরিকও ছিলেন। ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে আটকা পড়েছিলেন তাদের অনেকে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মার্কিন সরকার যে সব টাকাপয়সা দেবার ঘোষনা দিয়েছে এখানে থাকলে তারা তা পেতেননা।
এটা সত্য করোনা শনাক্তের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম প্রস্তুতি শুরুতে বাংলাদেশের ছিলোনা। এই সামর্থ্য ছিলোনা অনেক দেশেরই। বাংলাদেশ এরমাঝে সে সক্ষমতা অর্জন শুরু করেছে। আর টেস্টের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিলোনা বলে দেশের করোনা পরিস্থিতি অপ্রকাশিত আরও খারাপ, এমন ভাবার কোন কারন নেই। এটা একটি মহামারী রোগ। এটি যদি সমাজে সেভাবে থাকতো তাহলে অনেক লোক আক্রান্ত হতেন। যারা উদ্বেগ ছড়াচ্ছেন তারাও আক্রান্ত হতেন।
বাংলাদেশে এখন ঋতু পরিবর্তন হেতু জ্বর-ভাইরাস-শ্বাসকষ্ট সহ নানান রোগ সমাজে আছেন। বাংলাদেশের দূষিত আবহাওয়ায় দেশজুড়ে এমন রোগী বেড়েছে। দেশজুড়ে সৃষ্ট উদ্বেগের কারনে এদের অনেকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেননা। চিকিৎসা পাচ্ছেননা কিডনি ক্যান্সারের রোগীরাও। চিকিৎসার অভাবে এদের অনেকে মারা যাচ্ছেন। কাজেই এমন যারা মারা যাচ্ছেন তারা সবাই যে করোনা রোগী এমন ভাবার কোন কারন নেই। এটা হলে তাদের সংস্পর্শে আসা পারিবারিক সদস্যরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হতেন।
এখন বলি বাংলাদেশে কেনো করোনা ছড়াবার সুযোগ কম। অস্ট্রেলিয়া-ইতালি সহ যত দেশে এই রোগ ছড়িয়েছে এসব দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা বংশোদ্ভূত বয়স্ক নাগরিক আছেন। এই বয়স্কদের আবার প্রিয় একটি নেশা তাহলো প্রমোদতরী তথা ক্রুজে করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো। ইতালির জুতো, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অনেককিছুও চীনাদের কর্তৃ্ত্বে। এসব উৎসের মাধ্যমে দেশগুলোতে এই রোগ ছড়িয়েছে বা এখনও ছড়াচ্ছে। এরা সবাই সুযোগ পেলেই ব্যবসা বাড়াতে আমেরিকায় যায়। এসব উৎসগুলো বাংলাদেশের নেই।
আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টেক্সি-উবার চালান। এই পরিস্থিতিতেও এমন আক্রান্ত যাত্রীদের নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে তাদের অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি ডাক্তারও। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আমেরিকারও মসজিদ সহ ধর্মীয় উপসনালয়গুলো বন্ধ করা হয়েছে। এরপরও অনেকে নিজেদের মধ্যে টেক্সট বিনিময় করে কোন বাড়িতে মিলিত হয়ে জামাতে নামাজ পড়তে গিয়েও দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যেমন ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে করোনা ছড়িয়েছে তবলিগ জামাতের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে মূলত কিছু প্রবাসীর মাধ্যমে রোগটি এসেছে। এদের মাধ্যমে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগ এরমাঝে সুস্থ হয়ে গেছেন। প্রবাসীদের প্রায় সবার কোয়ারিন্টান সময় শেষ হয়ে গেছে। যাদের চিহ্নিত করা যায়নি তারাও মোটামুটি নিরাপদ ছিলেন বলে রোগটি অন্য দেশগুলোর মতো মহামারী আকারে ছড়ায়নি। এখন যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদেরকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাধ্যতামূলত কোয়ারিন্টানে রাখা হচ্ছে। কাজেই সবাই সতর্ক থাকলে নতুন বিপদ ঘটার সুযোগ কম। এখন জনসমাবেশ যাতে কোথাও বাড়তে না পারে, সামাজিক দূরত্ব যাতে সবাই মেনে চলে সেই কড়াকড়ি চালিয়ে যেতে হবে। সামাজিক দূরত্ব কড়াকড়িভাবে মেনে চলার সুফল পেতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশের মানুষের সামর্থ্য অনেক কম, কিন্তু এখন যে পরিমান মানুষের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে যে পরিমান মাস্ক ব্যবহার করেন তা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। মাস্ক একটি বড় বিপনন পন্য হয়ে উঠেছে। হাত ধোয়া আর মাস্ক ব্যবহারের এই অভ্যাস অব্যাহত রাখা গেলে বাংলাদেশে আগামীতে আরও অনেক রোগের ঝুঁকি কমে আসবে। করোনার চাইতে বাংলাদেশের বড় বিপদ যারা কাজ হারিয়েছে তাদেরকে সমর্থন দেয়া। আগে যে কোন দুর্যোগে বাংলাদেশ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়তো। এখন অবস্থা পাল্টেছে। বাংলাদেশ সরকার এখন সেনাবাহিনী-বেসামরিক প্রশাসনের মাধ্যমে লোকজনকে চাল সহ জরুরি পন্যের প্যাকেট পৌঁছে দেয়া শিখেছে, এবং এর দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাটি আশাব্যঞ্জক।
চট্টগ্রামে পুলিশকে ফোন করলে তারা অসহায় মানুষজনের বাড়িতে বাজার সদাই পৌঁছে দেয়, পুলিশের গাড়িতে করে রোগীকে পৌঁছে দেয় হাসপাতালে, এটিইতো দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রকৃত বাংলাদেশের চেহারা। এসব দেখেশুনে আমি খুব আশাবাদী, বাংলাদেশ ভালোভাবে এই দুর্যোগ সামাল দেবে। যারা উদ্বেগ ছড়াচ্ছেন তাদের মুখে চুনকালি পড়বে। ভালো থাকুক বাংলাদেশ, আমাদের সবার প্রিয় জন্মভূমি।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা