বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কেননা নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমানে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করেছে।
‘মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট ইন ক্রাইসিস সিচুয়েশন’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক একথা বলেন। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডামে অনুষ্ঠিত অংশগ্রহণকারীদের প্রশংসা অর্জন করে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক বিকারগ্রস্ততা, ক্ষোভ, অবিশ্বাস, নির্যাতনপরবর্তী ভীতি ইত্যাদি বিদ্যামান থাকায় বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তিনি ডাচমন্ত্রীর সমর্থন কামনা করেন। ডাচমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ সেমিনারে অংশ নেয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করে এর সার্বিক উন্নতিকল্পে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা সকলের অবগতির জন্য তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গৃহীত কর্মসূচি এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহীত কর্মসূচি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, অতীতে মানসিক স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এ সমস্যার প্রতিকারকল্পে দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণমাত্রায় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সুবিধা চালু করেছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতের কিছু ভুমিকা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ১০৫ বছরের পুরাতন ইন্ডিয়ান লুনাচি অ্যাক্ট, ১৯১২ বিলুপ্ত করে মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮ পাস করা হয়েছে। এছাড়া, সমস্যাটির টেকসই সমাধানকল্পে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা হোসেনের নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’ প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী সিগরিদ কাগ সম্মেলনটির উদ্বোধন করেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং মানবিক ও জরুরি ত্রাণ সহায়তা সংক্রান্ত সমন্বয়ক মার্ক লোকক, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সেক্রেটারি জেনারেল এলহাজ আস সি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ সংক্রান্ত সহকারী মহাপরিচালক রেন মিং ঘুই, ইউরোপীয়ান কমিশনের মানবিক সহায়তা ও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিশনার ক্রিস্টস স্টিলিয়ান্ডেসসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় অসাধারণ ভূমিকা রাখায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গত সপ্তাহে সায়মা হোসেনকে বিশ্বের সেরা ১০০ জন ইনোভেটিভ গ্লোবাল উইমেন লিডার ইন মেন্টাল হেলথের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক যেখানে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় সুবিধাসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা