অনলাইন ডেস্ক
চাহিদার এমন উল্লম্ফনে অক্সিজেন সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভারতকে। কভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ভারতে অক্সিজেনের চাহিদা এত ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে, যার ফলে তা সময়মতো সরবরাহও করা যাচ্ছে না। অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হচ্ছে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের। ২৩ এপ্রিল ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবেই ২০ জন কভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিও বর্তমানে বেশ নাজুক। গতকালই মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ১০ দিনে এক হাজার রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ঘোষিত কঠোর নিষেধাজ্ঞা চলছে এখন দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশেও ভারতের মতো অক্সিজেন সংকট হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত প্রায় এক মাসে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
দেশে বর্তমানে অক্সিজেনের চাহিদা ১৫০ টন। এর মধ্যে লিন্ডে ও স্পেক্টা সরবরাহ করছে যথাক্রমে ৮০ টন এবং স্পেক্ট্রা ৩৮ টন। সম মিলিয়ে ১১৮ টন। কিন্তু লিন্ডের দুটি ইউনিট যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেজন্য অধিদপ্তর ৩টি নতুন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব উৎস থেকে পাওয়া যাবে মোট ৭৫ টন। তবে বর্তমানে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৩৫ টন অক্সিজেন দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লি. দৈনিক ৭ টন, ইসলাম অক্সিজেন ২০ টন এবং এ কে অক্সিজেন লি. ৮ টন সরবরাহ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ায় হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে, যা বর্তমানে ১৫০ টনে পৌঁছেছে। এই চাহিদা আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, কিছুটা ঘাটতি থাকায় দুটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করত। এখন তা বন্ধ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে। এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন করতে বলা হবে।
এদিকে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়ার আগেই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করা দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, এজন্য আমাদের পরিকল্পনামাফিক কিছু কাজ করতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে দৈনিক রোগীর সংখ্যা কত, তাদের চাহিদা কত, কত সরবরাহ আছে এবং কী পরিমাণ ঘাটতি রয়েছে। এরপর একটি সমীক্ষা করতে হবে যে আগামী সাতদিন, ১৫ দিন বা এক মাসে কত রোগী হতে পারে এবং কত চাহিদা হবে। এটা একটা ধারণা। এরপর সরবরাহ নিশ্চিত করতে যারা অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন থেকে মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করতে বলতে হবে। এখানেও তাদের কত ক্ষতি হবে এবং কতটুকু চাহিদা পূরণ হবে, তা নির্ণয় করতে হবে।
দেশে সংক্রমণ শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশে অক্সিজেনের চাহিদা ও সরবরাহ সংকট এখন তীব্র না হলেও কভিড চিকিৎসার অপরিহার্য মেডিকেল ডিভাইসের সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বলছে, চাহিদার তুলনায় সরকারের কাছে মজুদ রয়েছে মাত্র ৩৯ শতাংশ যন্ত্রপাতি। অপর্যাপ্ত মজুদ থাকা যন্ত্র ও উপকরণগুলোর মধ্যে আছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, মনিটরসহ আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন সিলিন্ডার।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা