অনলাইন ডেস্ক
বাস্তবে রুপ নিলো বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বৃহস্পতিবার ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান ‘২ এফ’ বসানো হয়।
এর ফলে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার কাঠামোর পুরোটাই দৃশ্যমান হলো। সংযুক্ত হলো পদ্মার এপাড়-ওপাড়, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের এ তথ্য জানান।
করোনার কারণে আনুষ্ঠানিকতা নেই, তবু এর মধ্যে মাওয়ার কুমারভোগ ইয়ার্ডে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্বপ্নের সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি। চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি করছে সেতুর কাজ। স্প্যানের দুই পাশে তাই বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় পতাকা সেটে দেওয়া হয়েছে। দু’দেশের সুসর্ম্পকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বড় একটি অংশ জুড়ে। স্প্যানের গায়ে লিখে রাখা হয়েছে, যে শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে কাজের এত অগ্রগতি, তাদের কীর্তিগাথা।
বুধবার ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৫টা বাজতেই ইয়ার্ড থেকে রওনা হয় ক্রেনবাহী জাহাজ। পরে ৫টা ৪৫ মিনিটে খুঁটির কাছে পৌঁছায় জাহাজটি। ৪১তম স্প্যানটি পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে ইয়ার্ডে সেতুর স্প্যান সংশ্লিষ্ট কাজ শেষ হলো। এ ইয়ার্ডেই ফিটিং করা হয় সব কয়েকটি স্প্যান।
স্প্যানটি বাংলাদেশ ও চীনের পতাকার রঙে সাজানো ছিল। তবে নিরাপত্তার কারণে কোন রকম অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়নি।
এদিকে, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও দ্রুতগতিতে চলমান। সেতুতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোড স্ল্যাব। এরই মধ্যে এক হাজার ২৩৯টিরও বেশি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেল স্ল্যাব। যার মধ্যে এ পর্যন্ত এক হাজার ৮৬০টিরও বেশি বসানো হয়েছে।
যাত্রাটা শুরু হয়েছিল এখন থেকে ৩ বছর আগে, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
পদ্মা সেতুতে মোট ব্যয় হচ্ছে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সর্বশেষ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিলো ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল ডিপিপি’র (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার) থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অতিরিক্ত এ ব্যয় বেড়েছে।
২০০৭ সালে একনেক ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিক প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারো ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ আরও ১৪শ কোটি টাকা বেড়েছে।
সেতু বিভাগ আরও জানায়, মূল ডিপিপি’তে ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় প্রাক্কলত ছিলো ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু এখন মোট ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে দুই হাজার ৬৯৮ হেক্টর। অতিরিক্ত জমি বাবদ মোট ব্যয় প্রয়োজন দু হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। পদ্মাসেতু প্রকল্পে ভূমিসহ অধিগ্রহণ বাবদ আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।