অনেক ইস্যুতে ভিন্নমত থাকায় ‘যুদ্ধবাজ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টনকে বরখাস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে ট্রাম্প নিজেই টুইট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, আমি জন’কে পদত্যাগ করতে বলেছি। তিনি মঙ্গলবার সকালে তা পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাকে। ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন নতুন একজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা তিনি আগামী সপ্তাহেই নিয়োগ দেবেন। ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে জন বল্টনকে আমি জানিয়ে দিয়েছি, হোয়াইট হাউসে তার আর কোনো কাজ নেই। তার অনেক সাজেশনের সঙ্গে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করি। পশ্চিমা সব মিডিয়ায় এ খবর প্রচার হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে ইরান- সব বিষয়েই পররাষ্ট্রনীতির অনেক ইস্যুতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ছিল তার বিরোধ বা দ্বিমত। তাকে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কট্টর অবস্থানে থাকা নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাকে বরখাস্ত করার বিষয়ে ট্রাম্পের টুইটের কিছুক্ষণ পরেই টুইট করেছেন জন বল্টন। তিনি তাতে পদত্যাগের ভিন্ন একটি আখ্যান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমিই পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। জবাবে ট্রাম্প তাকে বলেছেন, বুধবার সকালে আসুন এ নিয়ে কথা বলি। এখানে উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদে জন বল্টন হলেন তৃতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এর আগে এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন মাইকেল ফ্লিন এবং এইচআর ম্যাকমাস্টার। সবারই পরিণতি এক হয়েছে। তাদেরকে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ উপদেষ্টা জন বল্টন দায়িত্ব পালন করছিলেন ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে।
বরখাস্ত করার খবর যখন ছড়িয়ে পড়লো তখন জন বল্টন ফক্স নিউজের একজন উপস্থাপককে এ বিষয়ে টেক্সট ম্যাসেজ পাঠান। ওই উপস্থাপক তখন সরাসরি সম্প্রচারে ছিলেন। তাকে জন বল্টন জানান যে, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ ত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া তিনি টেক্সট মেসেজ পাঠান ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক রবার্ট কস্টার কাছে। এতে জন বল্টন লিখেছেন, যথাযথ উপায়ে আমি আমার বক্তব্য বলবো। আমার মূল উদ্বেগ হলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে।
এখানে উল্লেখ্য, জন বল্টনকে বরখাস্ত করার ঘটনাটি আকস্মিক ও বিস্ময়কর। এ ঘটনার ঠিক দু’ঘণ্টা আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মনুচিনকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে একটি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন জন বল্টন। এরপরই তাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা আসে। ফলে এখন ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চার্লস কুপারম্যান। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা।
হোয়াইট হাউসের সূত্রগুলো কি বলছে? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ, উপদেশ দিয়ে থাকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু জন বল্টনের অধীনে হোয়াইট হাউসের ভেতরে এটি আলাদা একটি সত্তায় পরিণত হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, হোয়াইট হাউসের ভেতরে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতেন জন বল্টন। তিনি আলাদাভাবে সেখানে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। ওই কর্মকর্তার মতে, বিভিন্ন মিটিংয়ে যোগ দিতেন না জন বল্টন। তিনি নিজেই নিজের কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করতেন।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বল্টনের নিজস্ব অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল। তিনি কখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে জানতে চাইতেন না যে, ‘আপনার অগ্রাধিকার কি?’ এক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে কি থাকবে তা নির্ধারণ করতেন বল্টন। ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সিবিএস’কে বলেছেন, বল্টন নিজে এমন সব পথ বা মহাসড়কে উঠে গিয়েছিলেন, যাতে প্রেসিডেন্টসহ হোয়াইট হাউসের অনেক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠতেন।
কীভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে মতপার্থক্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারক ছিলেন জন বল্টন। ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক ইস্যুতে যে কট্টর অবস্থানে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, এর প্রধান কারিগর এই জন বল্টন। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এতে বিরোধিতা করেছেন বল্টন। এখানেই শেষ নয়। তিনি উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও আফগানিস্তান নীতিতে অত্যন্ত কঠিন অবস্থান নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে যে সামিট হওয়ার কথা ছিল তা ভেঙে যাওয়ার জন্য জন বল্টনকে দায়ী করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। কারণ, ওই সময় জন বল্টনের পরামর্শে এমন কিছু সমঝোতা-অযোগ্য দাবি তোলা হয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করে পিয়ংইয়ং। এ ছাড়া তিনি তালেবানদের সঙ্গে শান্তি সংলাপের বিরোধিতা করেছেন। এমন একটি বৈঠক গত সপ্তাহান্তে হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এ জন্য তালেবান নেতাদের প্রথমবারের জন্য মুখোমুখি আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে দেন। ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে।
এ বিষয়ে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন বলছে, ওই বৈঠক নিয়ে জন বল্টন যুক্তি দেখিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যাদেরকে সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে চিহ্নিত করেছে তাদেরকে ক্যাম্প ডেভিডে আমন্ত্রণ জানানোর ফলে ভয়াবহ এক নজির স্থাপন হবে। যুদ্ধবাজ মানসিকতার জন্য পরিচিতি আছে বল্টনের। একবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই এ নিয়ে মজা করে বলেছিলেন, এমন কোনো যুদ্ধ নেই, যা জন বল্টন কখনো পছন্দ করেন না। অর্থাৎ সব যুদ্ধই পছন্দ তার। এই বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেনিজুয়েলা নীতি ব্যর্থ হওয়ার জন্য ক্ষুব্ধ হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে ভুলপথে নিয়ে গেছেন বল্টন। বল্টন তাকে বুঝিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা কত সহজ হবে।
NB: This post is copied from mzamin.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা