অনলাইন ডেস্ক
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো বেশি। তবে ভ্যাকসিনসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাবে বরাদ্দের হবে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ২২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগকে দেয়া হবে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নতুন বাজেটের আকার হতে পারে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা। প্রয়োজনে তা বাড়তে বা কমতে পারে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করোনার কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে লণ্ডভণ্ড গোটা বিশ্বের অর্থনীতি। এই ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। প্রথম ধাপে করোনার প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই আঘাত হেনেছে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় ঢেউ। তাই এখন সবার নজর ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন বা টিকার দিকে। অর্থাৎ জনগণের জন্য এই টিকা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে সরকারকে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট খাতেও বাড়াতে হচ্ছে কর্মসূচি। ফলে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকারমূলক খাতগুলোর মধ্যে চলে আসছে স্বাস্থ্যখাত। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যখাতে গত বছরের তুলনায় এবার বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, বাজেটকে অংশীদারত্বমূলক করতে অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বেশ কিছু প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়েছে। করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও ভার্চুয়ালি কয়েক ধাপে আলোচনার আয়োজন করে অর্থ বিভাগ। এর পাশাপাশি করোনার প্রভাব কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি কতোটা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়ে চলছে নানা পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসহ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিশেষ গুরুত্ব পাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংকট লাঘবে চলতে থাকা বিভিন্ন কর্মসূচি।
এদিকে ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব সূচক অর্জনের জন্য রাজস্ব আয় জিডিপির ১৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর জিডিপির ১ শতাংশ হারে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এই বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে তিন লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার। এছাড়া নন-এনবিআর রাজস্ব ১৬ হাজার কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর আদায়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সম্ভাব্য কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। করের আওতা সম্প্রসারণ, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বাধ্যতামূলকভাবে স্থাপন এবং শতভাগ স্ক্যানিং, কর ব্যবস্থায় কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউজ অটোম্যাশন দ্রুত সম্পন্ন করা কর রাজস্ব সংগ্রহের কৌশল হিসাবে রাখা হয়েছে। এছাড়া পূর্ব নির্ধারিত ফি-রেট বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনঃনির্ধারণ এবং সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির লভ্যাংশ নিয়মিত সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বিষয়কে কর বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহের সম্ভাব্য কৌশল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
যেসব খাতে অগ্রাধিকার আসন্ন বাজেটে মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকারমূলক খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়ন, করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজ প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা, ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণও (মুজিববর্ষের প্রধান কার্যক্রম) অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিনামূল্য বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখা, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়নও প্রাধান্য পাবে আসন্ন বাজেটে।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে গত বছর যে বরাদ্দ ছিল সেটাই তো মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারেনি। সামনের বাজেটে কিছু বাড়াচ্ছে সেটা ঠিক আছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যদি কোনো মন্ত্রণালয় ভালো পারফর্ম করে এবং তাদের যদি আরও অর্থের প্রয়োজন হয়, সেটা তো অর্থ মন্ত্রণালয় যে কোনো সময় দিতে পারে। যা পরে রিভাইজড (সংশোধিত) বাজেটে পাস করে নেয়া হয়। অর্থ বরাদ্দ যেটি হচ্ছে সেটা উদ্বেগের কোনো বিষয় নয়, মূল বিষয় হচ্ছে সময় মতো যথাযথভাবে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে কি-না। আর ভ্যাকসিন কোথায় কী দামে কেনা হচ্ছে সেটাও দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে তো সরকার বৈদেশিক সাহায্য পেতে পারে। রাশিয়া ভ্যাকসিনের জন্য কতটুকু চার্জ করবে জানি না, তাই যাদের মাধ্যমে আনা হচ্ছে তাদের মাধ্যমে নেগোসিয়েট করতে হবে, দামটা যেন বেশি না হয় এবং ভ্যাকসিনের দাম যেটাই পড়ুক, বিশ্বব্যাংক-এডিবির মতো সংস্থা থেকে আমরা সহায়তা পেতে পারি।’
২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে প্রস্তাবিত মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। আর তার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা