বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আর মাত্র ১৪ দিন
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আর মাত্র ১৪ দিন বাকি। চলছে ক্ষণগণনা। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে লালসবুজের কথা মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং সিনিয়র সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, শেখ সাহেবের আত্মজীবনী বা অন্যান্য ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সবসময় আন্দোলন করে গেছে। এই আন্দোলন শুরু হয়েছে ইংরেজ ক্ষমতায় আসার পর থেকে। কিন্তু যেহেতু ইংরেজ নির্যাতন কৃষকদের উপরে খুব বেশি ছিল সেইজন্য এই আন্দোলন প্রতিবাদী আন্দোলনে বিভক্ত হয়। সমাজটা বিভক্ত হয়েছিল সুবিধাভোগী এবং সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে। আবার সুবিধাভোগীদের মধ্যে একটি অংশ সুবিধাবঞ্চিত হয়েছিল ইংরেজ আমলে। তারা এসে যোগ দিয়েছিল এই আন্দোলনে।
তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে প্রতিরোধের বিষয়টি পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলায় বেশি হয়েছে। ইংরেজরা একটা দালাল শ্রেণি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে কিন্তু কৃষকদের কারণে তারা তা পারেনি। এরমধ্যে গ্রামে একটি মধ্যস্বত্ত্বভোগী শ্রেণি প্রভাবশালী হয়ে উঠল এবং ভারতে শ্রেণি সমাজের তৈরি হলো। শেখ সাহেব যে অঞ্চল থেকে এসেছেন, গোপালগঞ্জ। এটি প্রান্তিক অঞ্চল। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ হচ্ছে কৃষক এবং মুসলমান। হিন্দু জনগোষ্ঠি যেহেতু জমিদার বেশি ছিল তারা কলকাতাকে বেশি নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল কৃষক বিরোধী।
তিনি বলেন, শেখ সাহেবের জীবনে দেখা যায়, তিনি বিদ্রোহের রাজনীতি থেকে এসেছিলেন। বিদ্রোহের রাজনীতি তাকে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সমর্থকদের সঙ্গে মারপিটে বাধ্য করেছিল। এতে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি স্থানীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। অনেক দূরবর্তী গোপালগঞ্জ থেকে কলকাতায় অনেক ক্ষোভ নিয়ে এসেছিল। সে এসেছিল গোপালগঞ্জের সেরেস্তাদের প্রতিনিধি থেকে। যারা কৃষকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলন করতে রাজী ছিল। এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তনগুলো হয়। ১৯৪০ এ স্বাধীন হওয়ার কথা ছিল সেটা ৪৬ এ মুসলিম লীগ বন্ধ করে দেয়। সেইসময় যদি ৪০ এর রাজনীতি দেখা যায়, তখন স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশের ভাবনাচিন্তা ৫২ সালে শুরু হয়নি। এটা কৃষকের মুক্ত এলাকা হবে এই স্বপ্ন অনেক লোককে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিল।
শেখ সাহেব কোনদিন এই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে কংগ্রেসের বাঙালি এবং মুসলিমলীগের বাঙালিরা এক হয়ে একটা স্বাধীন পূর্ববঙ্গ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এতে কংগ্রেসের অতটা আগ্রহ ছিলনা। আমার মনে হয়, ১৯৪৭ সালেই শেখ সাহেব বলছেন, যে পূর্ব বাংলা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। ৫২ তে ভাষা আন্দোলন করে আসলে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখায়নি। তিনি এই স্বপ্ন অনেক আগেই লালন করে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সে জানত কি হতে যাচ্ছে। একারণেই ৪৭ এর পরেই নতুন পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে লিপ্ত হয়। এই ইতিহাসটা আমাদের অনেকটা মিলিয়ে গেছে। কারণ, আমরা এটাকে ভাষার সংগ্রাম করেছি, বৈষম্যের সংগ্রাম করেছি। আমি মনে করি, শেখ মুজিবুর রহমান যেটা করতে চেয়েছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য একটা মুক্ত এলাকা। এই কারণে ৭১ সালে কৃষককে বলতে হয়নি তোমরা আওয়ামীলীগ করো নাকি কি দল করো! তুমি নিজের জন্য বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করো। এই কারণে কৃষকের যে দীর্ঘ লড়াই সেটা ১৯৭১ সালে এসে মুক্ত হয়। শেখ সাহেব কোনদিনই স্বাধীন বাংলাদেশের ভাবনার বাইরে যাননি। উনি ৩৯ এ রাজনীতি শুরু করেন। ৪০ এ লাহোর প্রস্তাব হয়। সেখানে পরিষ্কারভাবে লেখা ছিল এটা আলাদা দেশ হবে। তার ঘোষণাটা কোন বিষয় ছিল না, নেতৃত্বটাই প্রধান ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই নেতৃত্ব ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। অন্য কারো হাতে ছিল না। এর ধারাবাহিকতার সমাপ্তি এসেছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। এই বাংলার কৃষক মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে সবসময় যোগসাজশ করে লড়াই করে। সেটা ৩৯ থেকে শুরু করে ৭১ পর্যন্ত আমরা সবসময় দেখেছি।
সাক্ষাতকার গ্রহণ : তাসকিনা ইয়াসমিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা