ফজলুল বারী : সারা দুনিয়াজুড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামে ভিন্ন রূপ নিয়েছিল! ওখানে তেমন ভাইরাসের ভূমিকায় প্রশাসনে ঝেঁকে বসেছিলেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিনসহ তার তিন গুন্ডা কর্মকর্তা! ক্ষমতার দাপটে তারা গুন্ডামি করেছিলেন বলেই তাদের গুন্ডা বিশেষন প্রাপ্য। গুন্ডাকে গুন্ডা না বললে তার প্রতি অবিচার করা হয়। কুড়িগ্রামের সুলতানা পারভিনের তিন গুন্ডার নাম হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এস্ম রাহাতুল ইসলাম। ডিসির নির্দেশে অথবা ডিসিকে খুশি করতে রাতের বেলা একজন মফঃস্বল সাংবাদিক আরিফকে বাড়ির দরজা ভেঙ্গে তারা গুন্ডামি করেছিলেন! চিন্তার বাইরের একটি ঘটনা। আজকের যুগে এটা অকল্পনীয়। আগের এক লেখায় উল্লেখ করেছি এখন অনেক চমৎকার মানবিক গুনাবলীর তরুন কর্মকর্তা প্রশাসনে আছেন। সুলতানা পারভিন ও তার তিন গুন্ডা এমন চমৎকার কর্মকর্তাদের অবদানকে খাটো করেছেন।
কুড়িগ্রাম প্রশাসনের এই প্রত্যাহার করা ভাইরাস কর্মকর্তারা আরেকভাবে দেশকে-প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। বাংলাদেশের নানা অনাচারের মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতগুলো প্রশংসনীয় কাজ করছে। সুলতানা পারভিন ও তার তিন গুন্ডা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাংবাদিকের বাড়ির দরজা ভেঙ্গে অনুপ্রবেশ, তাকে শারীরিক নির্যাতন, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের খাওয়া মদের অবশিষ্ট আধা বোতল আর গাজার গাজাখুরি মামলায় নির্যাতন-নিগ্রহের সব কল্পনার ধারনাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন ভ্রাম্যমান হাসপাতালকে কনসেপ্টকে। বাংলা ট্রিবিউন তাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ছেলেটির পক্ষে দাঁড়ানোয় ওই চার প্রশাসনিক গুন্ডার গুন্ডামির নগ্নরূপ দেশ এবং জনগনের সামনে প্রকাশিত হয়। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত সাড়া দেয়ায় কৃতজ্ঞতা। এ নিয়ে সরকারি এক সংসদীয় কমিটির সদস্য টেলিভিশনে যদি দোষ করে যদি অন্যায় করে বলে আমতা আমতা করছিলেন। কিন্তু সরকার আমতা আমতা নামতা পড়েনি। ব্যবস্থা নিয়েছে দ্রুত। তবে একখান কথা আছে।
জনগনের মনের কথা পড়ুন। এই কর্মকর্তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। ফৌজদারি অপরাধ বলতে তারা জনগনকে যা বোঝাতেন এরাও তাই করেছেন। কাজেই জনগন যদি ফৌজদারি অপরাধে গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখিন হয়, এরা হবেন না কেনো? এক দেশে কেনো দুই আইন? এটা কি আমাদের সংবিধান অনুমোদন করে? আসলে সরকারি কর্মকর্তাদের গুন্ডামির অপরাধে গ্রেফতার-বিচারের সম্মুখিন না করায়, অপরাধ করলে প্রত্যাহার করে তাদের চাকরি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে স্থানান্তর করায় এরা আম জনতাকে শুয়োরের বাচ্চা কুত্তার বাচ্চা মনে করে। যা খুশি তা করে এসব প্রশাসনিক গুন্ডারা। এমন দুষ্ট লোকজনের দায় কেনো নেবে বাংলাদেশের সরকার এবং প্রশাসন? গুদামের পচা আলুতো ফেলে দিতে হয়। তা না করলে এরা ভালো আলু নষ্ট করে। পচা আলু এই গুন্ডা কর্মকর্তাদের ফেলে দিন। জনগনের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। জনগনের সামনে এমন দৃষ্টান্তের বড় অভাব। ভালো কর্মকর্তারা জনগনের মাথার মনি। গুন্ডাগুলো দেশ-জনগনের বোঝা। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় এদের পুষবেননা প্লিজ।
এই লেখা লিখতে লিখতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক ভাষনের অংশ মনে পড়লো। বঙ্গবন্ধু বলছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনা দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মাইনা দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান কথা বলেন। ওরাই মালিক। সরকারি ক র্মচারীকে বলব, মনে রেখো এ স্বাধীন দেশ, এ ব্রিটিশ কলোনী নয়, পাকিস্তানি কলোনি নয়। যে লোককে দেখবা তার চেহারাটা হয়তো বাবার মতো, তোমার ভাইর মতো। ওর পকেটে পয়সা, ওরাই হবে, সম্মান বেশি পাবে, কারন ওরা নিজে কামাই কইরা খায়, —আমার বাহে ডাক্তারি পাস করায় কে? আর ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করায় কে? আর সায়েন্স পাস করায় কে? আর বৈজ্ঞানিক করে কে? আর অফিসার করে কে? কার টাকায়? বাংলাদেশের দুঃখী জনগনের টাকায়। –তাদের ইজ্জত করে কথা বলেন, তারাই ইজ্জত পাবার মালিক’। জাতির পিতা কত আগে আমাদের উদ্দেশে এই দিক নির্দেশনামূলক কথাগুলো বলে গিয়েছেন। এখন তাঁর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে কত আয়োজন চলেছে সারাদেশে। আর এই সময়ে চার গুন্ডা কর্মকর্তা দেশে এভাবে গুন্ডামি করে!
আর এই সময়ে তাঁর অনুসারি দলের সরকার এসব গুন্ডা কর্মকর্তাদের রক্ষার আড়াল করার কায়দা কানুন যদি করে, তা জাতির পিতার প্রতি স্পষ্ট অবমাননা করা! জাতির পিতার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই চার গুন্ডা কর্মকর্তাকে স্রেফ জবাই করুন। জবাই মানে চাকরি থেকে বিদায়। তাদের ফৌজদারি অপরাধে গ্রেফতার-বিচারের সম্মুখিন করতে হবে। নইলে বলবো জাতির পিতার সম্মানে যা কিছু করছেন তা স্রেফ ভন্ডামি।
সরকারি টাকায় পুকুর সংস্কার করে সেটির নাম সুলতানার সরোবর নামকরন করে কুড়িগ্রামে অমর হতে চেয়েছিলেন সুলতানা পারভিন! এখন তিনি গুন্ডামির অপরাধে সেখান থেকে বিতাড়িত। এখন সে পুকুর দেখে লোকজন বলবে গুন্ডামির কারনে সুলতানা ডিসিকে কুড়িগ্রাম থেকে বাইর করা দিছে। কুড়িগ্রামে তার কোন ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান হয়নি। উল্টো জনরোষের ভয়ে তাকে সেখান থেকে পুলিশ পাহারায় বের করে নিতে হয়েছে। গুন্ডা নাজিম উদ্দিন যেখানে যেতেন সেখানে মানুষ পিটাতেন! এমন শয়তান একটা লোককে জনগনের টাকায় পোষা হচ্ছে কাদের উদ্যোগে? এই গুন্ডাদের বিষয়ে একটি দৃষ্টান্ত সৃ্ষ্টি করা হোক। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে ফৌজদারি অপরাধ করলেও যদি তাদের গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখিন করা না হয় তাদের বলি, বঙ্গবন্ধুর ভাষনটি আবার পড়ুন, আবার শুনুন। বঙ্গবন্ধুর সম্মান যদি রাখতে না পারেন তাহলে এসব জন্মশত বার্ষিকী নিয়ে হাঁকডাক করা প্রহসন নয়তো কী? সাংবাদিক নির্যাতনকারী এই চার কর্মকর্তার গতিবিধি আমাদের জানাবেন। আমরা তা নিয়মিত জনগনকে জানাবো।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা