অনলাইন ডেস্ক
আজ আমরা জানবো এই এসইও সম্পর্কে। এসইও কী? কেন এসইও একটি চাহিদা সম্পন্ন স্কিল? আমরা এসইও বিশেষজ্ঞ মো. ফারুক খান-এর কাছ থেকে এ সম্পর্কিত সম্ভাবনা সম্পর্কে জানব। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে আসছেন।এসইও (SEO) হচ্ছে ‘Search Engine Optimization’-এর সংক্ষিপ্তরূপ। এটি একটি কৌশল, যার মাধ্যমে কোনো ওয়েবসাইট বা পেজকে সার্চ ইঞ্জিনের (যেমন : গুগল, বিং) টপ পজিশনে নিয়ে আসা সম্ভব। এসইও করার মাধ্যমে যে কোনো ব্যাবসার ব্র্যান্ডিং এবং সেল বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আরও সহজে বুঝানোর চেষ্টা করি। ধরুন, আপনার একটি ল্যাপটপের বিজনেস আছে, যেটি আপনি মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে একটি শোরুম থেকে পরিচালনা করেন। কিন্তু বর্তমান যুগে যে কোনো ব্যক্তি একটি ল্যাপটপ কেনার আগে একবারের জন্য হলেও এর দাম যাচাই করার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর সহায়তা নিয়ে থাকেন। আর এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ‘গুগল’, যেখানে আমরা আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে থাকি। তাই আপনার কাস্টমারও গুগল এ সার্চ করবে, ‘laptop price in bd’ এবং যারা টপ পজিশনে আছে তাদের ওয়েবপেজ ভিজিট করে ল্যাপটপের দাম সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে যাবে।
এখন আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, ক্রেতা তো অনলাইন থেকে ল্যাপটপ অর্ডার করবে না, তাহলে ওই র্যাংকে থাকা ওয়েবসাইটগুলোর লাভ কী? উত্তরটি খুব সহজ, যিনি ওয়েবপেজ থেকে দাম দেখলো, তিনি কিন্তু পণ্যটি কেনার সময়ও ওই প্রতিষ্ঠানের নাম মনে রাখে। মার্কেটে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে তার একটি প্রাইমারি অপশন হিসেবে বিবেচনা করে।
আর এটি হচ্ছে আপনার জন্য পজিটিভ একটি বিষয়, আপনার কাস্টমার সবসময়ই যে অনলাইন থেকে অর্ডার করবে বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু সে যেন আপনার সম্পর্কে জানতে পারে, যখন সে ওই প্রোডাক্ট সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে, এটি মুখ্য। এর ফলে আপনার ব্যবসার প্রচার ও প্রসার হয় এবং সর্বশেষে সেল বৃদ্ধি পায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি হচ্ছে এসইও।
আর এই এসইও-এর সার্ভিসটি সফলতার সঙ্গে দিয়ে যাচ্ছেন মো. ফারুক খানের প্রতিষ্ঠান খান আইটি, যারা ২০১৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং ও গুগল র্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের এসইও যাত্রা শুরুই হয়েছে তাদের মাধ্যমে, যাদের মধ্যে হাতিল ফার্নিচার, ওয়াল্টন এবং ইফাদ গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
মো. ফারুক খানের মতে, ছোট বা বড় যে কোনো ধরনের ব্যবসার জন্য এসইও মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব সর্বাধিক হওয়া উচিত। কেননা, এসইও কাজ করে আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ড তৈরিতে, যা এই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যুগে সব ব্যবসার মূল লক্ষ্য। আপনার ব্যাবসা নিয়ে যদি দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনাকে এসইও নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ই এখন অফলাইন সার্ভিসের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমেও বেশ সক্রিয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ই-কমার্স বাজার চার বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২০২৬ সালে ১০.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যে পৌঁছানোর অনুমান করা হচ্ছে। আর প্রতিযোগিতার যুগে এত সম্ভাবনাময় একটি সেক্টরকে আরো বেশি উন্নত করতে এসইও-এর বিকল্প নেই।
একটু চিন্তা করে দেখি, আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রয়োজনীয় তথ্য, সেবা অথবা প্রোডাক্ট এর জন্য গুগলে সার্চ করি ; যেমন সেটা হতে পারে কোনো বই, ব্যাগ, কোনো ফ্যাশন প্রোডাক্ট, মোবাইল ফোন , ঘরের জরুরি আসবাব অথবা চিকিৎসা কিংবা আইনি সেবা। এছাড়াও কোনো ইনফরমেশন / রিসার্চের জন্য আমাদের প্রথম এবং একমাত্র পছন্দ হয়ে থাকে গুগল। যেহেতু, আমরা সব ধরনের অনুসন্ধান এর জন্য গুগল কে বেস্ট অপশন বলে মনে করি, তাহলে কেননা আমাদের শুরুটা এখন থেকেই হোক ।
এ ছাড়া আমরা অন্যান্য প্লাটফর্মেও এসইও-এর প্রয়োগ করতে পারি, তার মধ্যে ইউটিউব এসইও একটি অন্যতম উদাহরণ। বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই ইউটিউবকে তাদের জীবিকার জন্য বেছে নিয়েছে এবং সফলতার সঙ্গে নিজেদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। তবে এই ইউটিউব চ্যানেল / ভিডিও-এর ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর জন্যও এসইও করা হয়ে থাকে। এখানেও সিস্টেমের ব্যাতিক্রম হয় না।
এবার আসি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এসইও এর চাহিদা সম্পর্কে জেনে নেই। ইন্টারনেটের একটি তথ্য মতে, ২০২৩ সালে এসইও এর সার্ভিস মার্কেট ছিল ৮০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা ২০৩০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০ বিলিয়ন ইউএস ডলার হতে পারে। মো ফারুক খান বলেন যে, বর্তমানে এসইও সার্ভিস মার্কেট এর এই চাহিদা দেখে অনেকেই এসইওকে একটি ভালো স্কিল হিসেবে বিবেচনা করছে এবং এটি শিখে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসইও সার্ভিস প্রদান করছে।
বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) তথ্যমতে, দেশে এখন মোট ১০.৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে যারা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিটেন্স দেশে নিয়ে আসছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সংখ্যার দিক থেকে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তাই মি. খানের এর মতে, এসইও হতে পারে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য একটি পছন্দের স্কিল।
বিশ্ববাজারে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ধারায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের আগ্রহী হতে হবে। তাহলে লাখো মানুষ নিজেদের কর্মসংস্থান গড়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারবে । তারা সহজেই ঘরে বসে ফরেন রেমিটেন্স সংগ্রহ করে নিজের ও দেশের উন্নয়নে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। তাই বর্তমানে মো. ফারুক খান বাংলাদেশের এসইও সম্ভাবনা নিয়ে বেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি যুবসমাজকে এসইও এর নানাবিধ উপযোগিতা ও সফলতার সম্ভাবনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫০০ শিক্ষার্থীকে সরাসরি এসইও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
এ ছাড়া ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি ১০ মিনিট স্কুলের এসইও প্রশিক্ষক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এডজান্ট ফ্যাকাল্টি। তার এই ফ্রি ক্লাস ভিডিওগুলো দেখে অনেকেই এসইও শিখে অনলাইন থেকে আর্নিং শুরু করেছেন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা