২০১৪ সালের ঘটনা। গুজব রটে যে, আফ্রিকাতে অনেককেই ভূতে ধরছে। প্রথমে লোকেদের জ্বর হচ্ছে, আর তার পরেই তারা মরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। নিজের গ্রাম, শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন মানুষজন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে যান বিজ্ঞানী, গবেষকের দল। রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ভূত নয় বরং এক অজানা ভাইরাসের সংক্রমণে শুরু হয়েছে এই মৃত্যুমিছিল। পরে এই ভাইরাসের নামকরণ হয় ইবোলা। এটা সে সময় মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবারও এই ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারীর আকার নিয়েছে কঙ্গোতে। রোয়ান্ডা সীমান্তবর্তী এলাকা পেরিয়ে যা হানা দিয়েছে উগান্ডাতেও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর রিপোর্ট বলছে, গত কয়েক মাসে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের। প্রতিদিনই অন্তত ১২ জন রোগী ইবোলা সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ডব্লিউএইচও এর ডিরেক্টর জেনারেল টেডরস অ্যাডহানম ঘেব্রেইসাস বলেছেন, ইবোলা ভৌগোলিক মানচিত্রের সীমানা অতিক্রম করে যাচ্ছে। রোয়ান্ডা সীমান্তবর্তী গোমা শহরের ২০ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভয়াবহ রোগের জীবাণু। এই মুহূর্তে ইবোলা সংক্রমণের হার বেশি আঞ্চলিক স্তরে। তবে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িযে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেনেভার সভায় এই সংক্রমণকে ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সঙ্কট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ডব্লিউএইচও।
মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইবোলা ভাইরাস। গিনির জঙ্গলে এ রোগের কথা শোনা যায় ২০১৩ ডিসেম্বরেই। প্রথমে ভূতপ্রেতের কারসাজি মনে করলেও, পরে জানা যায় এটি একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। ক্রমশ লাইবেরিয়া, গিনি আর সিয়েরা লিওন, তিন দেশেই বিশেষ করে ছড়াতে থাকে অসুখ। মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে দিনে দিনে।
১৯৭৬ সালে ইবোলা ভাইরাস প্রথম হানা দেয় আফ্রিকায়। ওই বছর মৃত্যু হয়েছিল ২৫১ জনের। আক্রান্ত প্রায় ৩১৮ জন। ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত শুধু গিনিতেই ইবোলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ২৫ হাজার। কঙ্গো, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সুদান, গ্যাবন, উগান্ডা, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়াসহ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ইবোলায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। ২০১৪ সালে গিনি, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া আর সিয়েরা লিওনেই শুধু ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দু’হাজারের বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছিল প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি।
কী এই ইবোলা ভাইরাস?
ইবোলা ভাইরাসের নামটি এসেছিল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইবোলা নদীর নামে। ওই নদীর জলেই প্রথম হদিস মিলেছিল এই মারাত্মক ভাইরাসটির। এর মোট পাঁচটি প্রজাতি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি প্রজাতি অত্যন্ত মারাত্মক। যাদের একটির ছোবলে মৃত্যু একেবারে নিশ্চিত।
ভাইরাসটির মূল বাহক এক প্রজাতির ফল-খেকো বাদুড়, টেরোপডিডাই। তারা ভাইরাসটি বহন করে, তবে নিজেরা আক্রান্ত হয় না। পরে ওই বাদুড় থেকে বিভিন্ন প্রাণীর দেহে রোগ সংক্রামিত হয়। আর কোনোভাবে আক্রান্ত প্রাণীদের মাংস খেয়ে ফেললে বা সংস্পর্শে এলেই ইবোলা ভাইরাসটি ঢুকে পড়ে মানবদেহে। তারপর সংক্রামিত মানুষের রক্ত বা দেহরস (যেমন হাঁচি, কাশি) থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে অন্য মানুষের দেহে।
কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এই ভাইরাসের সংক্রমণ?
জ্বর ও রক্তক্ষরণ দিয়ে শুরু হয়। সেই সঙ্গে গায়ে ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা, বমি, পেট খারাপ। ক্রমশ বিকল হতে শুরু করে লিভার, কিডনির মতো বিভিন্ন অঙ্গ। শেষে মৃত্যু ঘটে কোষের।
ডব্লিউএইচও-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা ৯০ শতাংশ। সংক্রামিত রক্তের সরাসরি সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাস তার সক্রিয়তা দেখাতে বাধ্য। তা ছাড়া, ঘাম, লালা, সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংসর্গ ইত্যাদির কারণেও রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
ইবোলা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হলেও, গরিব দেশগুলোতে বেশিরভাগ সময়তেই এই টিকা মেলে না। ফলে মৃত্যু হয় বিশাল হারে। ভারতে প্রথম ইবোলা ভাইরাস হানা দেয় আহমেদাবাদে, ২০১১ সালে। তারপর ২০১৪ সালে দিল্লিতে ইবোলায় আক্রান্ত হন আরও একজন। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’র পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার। তবে পেশাগত ক্ষেত্রে বা অন্যান্য নানা কারণে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে যে সমস্ত মানুষজন রয়েছেন বা ওইসব দেশ থেকে নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন, তাঁদের নিয়ে হিসাব করলে সংখ্যাটা এক লক্ষ বা তারও অনেকটা বেশি হতে পারে।
সূত্র : দ্য ওয়াল
NB:This post is copied from Kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা