সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : ফেব্রুয়ারিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ৫০টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। সোমবার (১৬ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্ততিতে তারা এতথ্য জানায়।
আর্টিকেল নাইনটিনের হিসেব অনুযায়ী, শুধু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের কমপক্ষে ৫০ টি ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে গুরুতর শারীরিক আঘাত ৪ টি, আঘাত ৯ টি, অপহরণ ১ টি, সরঞ্জাম নষ্টের ঘটনা ৫ টি, মানহানি ও হয়রানিমুলুক মামলা ২ টি, ক্রিমিনালাইজেশন অফ অনলাইন এক্সপ্রেশন ৯ টি এবং জেন্ডার বেইজ সেন্সরশিপের ঘটনা ১ টি রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে গত ১০ মার্চ থেকে নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে আর্টিকেল নাইনটিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আর্টিকেল নাইনটিন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বাক -স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিরুদ্ধ মত দমনে আইনের অপঅপব্যবহার সংবিধান স্বীকৃত আইনের শাসন ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা একটি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, বহু মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি সত্ত্বেও, স্বনিয়ন্ত্রণ বা সেল্ফ সেন্সরশিপ খুব স্পষ্ট, আগের আইসিটি আইন ও হালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই কঠোর এক আইন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অনলাইন ব্যবহারকারী ও সাংবিাদকদের ওপর মামলা ও প্রত্যক্ষ হামলা অব্যাহত রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ নিজেকে প্রকাশে অনিরাপদ বোধ করে এবং সাংবাদিকদের দ্বারা গঠনমূলক সমালোচনা বাধাগ্রস্থ হয়।
নিখোঁজ হওয়ার আগেরদিন কাজল এবং দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী সহ ৩০ জনের বিরদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর অধীনে “মিথ্যা তথ্য” সহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করার অভিযোগে বিতর্কিত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
কাজল ঢাকা থেকে প্রকাশিত পক্ষকাল ম্যাগাজিনের সম্পাদক। এর আগে তিনি দৈনিক সমকাল ও বনিক বার্তায় ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন।
তার ছেলে মনোরম পলক জানান, তাঁর বাবা ১০ মার্চ বিকেল ৩ টার দিকে অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন এবং রাত দশটা নাগাদ তিনি ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পায়।
কাজলের পরিবারের সন্দেহ যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তারা তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। এই জন্য পরিবারটি ১১ মার্চ চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল মোহনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মুশফিকুর রহমান ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট, নিখোঁজ হন। এর ৩ দিন পর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় তাকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট মতে, গত ১০ বছরে বিভিন্নভাবে ৫ শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। এই ব্যক্তিদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল, কে বা কারা তাদের অপহরণ করেছে তা প্রকাশ করা দরকার।
এদিকে গত ১৩ মার্চ মধ্য রাতে বাড়ি থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা জোর পূর্বক তুলে নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদক রাখার অভিযোগে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। গত ১৫ মার্চ তিনি কোর্ট থেকে জামিন পান। তাকে মধ্যরাতে ধরে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় ওই জেলার প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আরিফুলের সঙ্গে দেখা করার পর স্বামীর বরাত দিয়ে তার স্ত্রী জানান, শুক্রবার আরিফুলকে বাসা থেকে জোর করে তুলে নেওয়ার পর জেলা প্রশাসন কার্যালয় পর্যন্ত লাথি, চড়, ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্যান্ট-শার্ট খুলে উলঙ্গ করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। যারা তাকে নির্যাতন করেছেন, তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলে জানিয়েছেন আরিফুল।
গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় মাদারীপুর এলজিইডি অফিসের ইউডিএ নাসির উদ্দিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলে জাতীয় দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের জেলা প্রতিনিধি সাবরীণ জেরিনকে ডেকে নিয়ে তার উপর হামলা করা হয়। এই ঘটনায় সাবরীণ জেরিন গুরুতর আহত হয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। এই হামলার ঘটনায় তিনি ছাড়াও তার স্বামী প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আজকালের খবর পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি আরিফুর রহমান আহত হন।
আর্টিকেল নাইনটিন সাংবাদিক, ব্লগার এবং মানবধিকারকর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার এবং তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিরোধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা