অনলাইন ডেস্ক
১৯৪৮ সালের এই দিন থেকে দখলদারিত্ব শুরু করে ইসরাইলিরা। আর বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হতে শুরু করে ফিলিস্তিনিরা।
এর আগের দিন ১৪ই মে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে ইসরাইল।
আল-নাকবার পর ৭৬ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইসরাইলিরা। কোন পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবে, কোথায় ভ্রমণ করতে পারবে, কী পরিমাণ সম্পদ রাখতে পারবে এবং কোথায় বাড়ি তৈরি করতে পারবে, সবই নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল।
১. ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ
ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেম, গাজা ও পশ্চিম তীরে বসবাস করে। তবে তিন জায়গায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ইসরাইল মূলত অঞ্চলগুলির মধ্যে চলাচলে বাধা দেয়।
১৯৯৫ সালে অসলো চুক্তির অংশ হিসাবে দখলকৃত পশ্চিম তীরকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। সে হিসেব পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ এলাকা এবং প্রায় ৩ লাখ বাড়ি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ইসরাইলের হস্তান্তর করার কথা। এখনও এই এলাকা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তেল আবিব। ২৯০ টিরও বেশি অবৈধ ইহুদি বসতি এবং ফাঁড়ি তৈরি করেছে তারা। এসব বসতিতে প্রায় ৭ লাখ ইহুদির বাসবাস।
২. হাউজিং নিয়ন্ত্রণ
অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি তৈরি করতে ইসরাইলের অনুমতি লাগে। কিন্তু ইসরাইল তাদের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। ফলে অনুমতি ছাড়াই বাড়ি তৈরি করতে বাধ্য হয় ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অন্তত ১০ হাজার ৭০০টি ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন অবকাঠামো ভেঙেছে ইসরাইল। বাস্তুচ্যুত করেছে ১৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে।
৩. মানব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলের অভিযানের কারণে ফিলিস্তিনজুড়ে প্রায় ৫ লাখ ৭ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে।
সংস্থাটি মনে করে, এই অভিযান আগামী জুন পর্যন্ত গড়ালে ফিলিস্তিনে বেকারত্বের হার ৪৫ শতাংশ ছাড়াবে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৫ শতাংশ।
৪.বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরে সামরিক নিয়ন্ত্রণ লাভ করে ইসরাইল। ৩ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করে। তখন আরব বিশ্বের সাথে ফিলিস্তিনিদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল।
২০০১ সালে দক্ষিণ গাজার রাফায় ইয়াসির আরাফাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ধ্বংস করে ইসরাইলি বাহিনী। এটি ছিল ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের একমাত্র বিমানবন্দর।
৫. প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ
তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে পিছিয়ে ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইল যখন উচ্চ-গতির ফাইভ জি মোবাইল ইন্টারনেট চালু করছে, তখন ফিলিস্তিনি নেটওয়ার্ক অপারেটরা শুধুমাত্র অধিকৃত পশ্চিম তীরে থ্রি-জি এবং গাজায় টু-এ নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে।
৬. অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ
দখলকৃত পশ্চিম তীরের প্রধান ভূগর্ভস্থ জলাশয়সহ বেশিরভাগ পানি সম্পদ ইসরাইল নিয়ন্ত্রণ করে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা প্রায়ই এই জলাশয়ে প্রবেশ ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়।
২০২৩ সালে ইসরাইলিরা মাথাপিছু দৈনিক ২৪৭ লিটার নিরাপদ পানি ব্যবহার করেছে। আর অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা মাথাপিছু ব্যবহার করেছে মাত্র ৮২ লিটার পানি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিদিন মাথাপিছু ১০০ লিটার নিরাপদ পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
৭. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ন্ত্রণ
ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়েছে। গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান চালিয়ে যাদুঘর, গ্রন্থাগার, মসজিদসহ ২০০ টির বেশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্থাপনা ধ্বংস করেছে ইসরাইল।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বঞ্চিত করে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার করে আছে ইসরাইল।
জাতিসংঘের পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অর্থনীতিকে নিজেদের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে ইসরাইল।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরাইলি নিপীড়ন অব্যাহত রাখার এই ব্যবস্থার অর্থ আল-নাকবা আজও শেষ হয়নি।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা