সরকারী বিভিন্ন দফতর তথা জনসাধারণকে ধৈর্য ও শান্তভাবে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমকে সহযোগীতা করার জন্য আবেদন জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউ (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে যে কোন জিজ্ঞাস্য আইইডিসিআর অথবা নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অথবা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে জেনে নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশের ভেতরে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত করার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারী বিভিন্ন বিভাগ তথা জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা খুবই জরুরী। কিন্তু চীন ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীরা যদি আমাদের আচরণের কারণে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলে তাঁরা জ্বর-হাঁচি-কাশিতে ভুগলেও সরকারি স্বাস্থ্য সেবা নিতে নিরুৎসাহিত বোধ করবেন, স্বাস্থ্য বিভাগ তথা তথা সরকারী প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে কুন্ঠাবোধ করবেন। এর ফলে কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের জেলা-উপজেলা কর্মকর্তাদেরকে সন্দেহকৃত কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়ে নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে স্থানীয় সরকারী স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয়-সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি। পুলিশ এবং জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের আবেদন, কোভিড-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সকল দাািয়ত্ব পালন করছে এবং বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। প্রশাসনের কেউ কেউ স্ব উদ্যোগে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বাড়ী যাচ্ছেন। এ ধরণের তৎপরতা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের অনুরোধ, সিভিল সার্জন বা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে নিজ উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।
তিনি জানান, চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে প্রতিদিন অনেক যাত্রী বাংলাদেশে আসছেন। চীনের সকল প্রদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটে নি। চীনের যে সব অঞ্চলে মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, চীন সরকার সে সব অঞ্চলে গণ কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা জারী করেছে ও সকল প্রকার যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মহামারী উপদ্রুত এলাকা থেকে কারো বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই। অনুরূপভাবে গোটা সিঙ্গাপুর শহর মহামারী আক্রান্ত নয়। যে সব প্রতিষ্ঠানে ও বাসাবাড়ীতে কোভিড-১৯ নিশ্চিত রোগী সনাক্ত হয়েছে সে সব অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠানকে সিঙ্গাপুর সরকার শহরের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রোগীদেরকে আইসেলশন ও তাদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিন করেছে। ফলে সিঙ্গাপুরের কোভিড-১৯ উপদ্রুত অঞ্চল থেকে কোন যাত্রীর বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই।
”সতর্কতার অংশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশে আগত চীন ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীদের মধ্যে যারা জ্বর-হাঁচি-কাশিতে ভুগছেন তাদেরকে আইসোলেশন করে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নমুনা পরীক্ষা করছি। বাকীদেরকে যার যার বাসাতে স্বেচ্ছা-কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রেরিত সর্বশেষ খবরে আমরা জানতে পেরেছি যে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউ-তে আছেন। কোয়ারান্টাইনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। সিঙ্গাপুরে সর্বমোট ৭৫ জন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসাধীন। পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায় নি ৮৭১ জনের, পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন ১১৯ জন রোগী, এবং সুস্থ হয়ে বাড়ী ফেরত গেছেন ১৯ জন।
এদিকে, দেশে ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিমানবন্দর, স্থল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করা ১৯১৩৯২ জন যাত্রীকে কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এরমধ্যে একজনকে সন্দেহভাজন পায়, পরে তিনি ভাইরাসমুক্ত বলে জানা যায়। এ পর্যন্ত আইইডিসিআর ৯২ জনের কোভিড-১৯ ভাইরাস আছে কিনা সনাক্ত করেছে।
প্রয়োজনে কারো কোভিড-১৯ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার থাকলে আইইডিসিআর এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর : ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় :
× ঘনঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ) × অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না × ইতোমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন × কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন (হাঁচি/কাশির সময় বাহু/ টিস্যু/ কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন) × অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন × মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন × অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন × জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজন ব্যতীত এ সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন × অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা