ফজলুল বারী
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারন তিনি দুর্নীতি করেননা। বার বার তিনি বলে যাচ্ছেন দুর্নীতির টাকায় কাউকে অনৈতিক ভোগ বিলাসের জীবন যাপন করতে দেয়া হবেনা। দুর্নীতিবাজ যেই হোক দুর্নীতির শাস্তি তাকে পেতে হবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে দাপটে চলা চলতি শাসন সময়ের ওপর ভিত্তি করে কিছু লোকজন টাকার পাহাড় গড়েছে! দাপটে তাদের মাটিতে পা পড়েনা। দেশের কোন খবরই প্রধানমন্ত্রীর নজর এড়ায়না। সব খবরই তাঁর কাছে চলে আসে। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের মতো যুবলীগের সম্রাটের দাপটের কথা প্রথম তিনি দলের বৈঠকে ক্ষোভের সঙ্গে প্রকাশ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের চাঁদা চাইবার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের বৈঠকেই। এরপর দ্রুত ঘটনাবলী ঘটে যেতে থাকে। গণভবনে প্রবেশের পাশ বাতিল করা হয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের। এরপর তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারন সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হয়। গত ৪ জানুয়ারি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারমুক্তির ঘোষনা দেয়া হয় এই দু’জনের। কিন্তু সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের প্রতি শেখ হাসিনার রাগ না পড়ায় ৪ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে সাবেক নেতাদের অনেককে আমন্ত্রন জানানো হলেও সদ্য সাবেক দু’জন সেই তালিকাতেও ঢুকতে পারেননি।
আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম নামের সেবা প্রতিষ্ঠানটি দেশে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যা। কাকরাইল এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় ভবন নির্মানের কাজ চলছে। সেই নির্মানকে কেন্দ্র করে লাশ দাফনকারী সংস্থাটির কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা চেয়ে বসেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। কিন্তু শেখ রেহানা ওখানে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে খবরটি পৌঁছে যায় শেখ হাসিনার কাছে। ঘটনাটি বেশ আগের। শেখ হাসিনা তা ভুলে যাননি। কিন্তু তিনি কিছু না বললে যেহেতু গাছের পাতা নড়েনা সে কারনে অনেক দিন পর তার সাম্রাজ্যে হাত পড়ে। ওই হাত পড়াকে কেন্দ্র করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ক্যাসিনোর অন্ধকার জগতটি ফাঁস হয়। আর যুবলীগের টাকার খনিতে হাত পড়ায় ক্ষিপ্ত হন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। আইন শৃংখলা সংস্থাগুলোকে শাসিয়ে তিনি বলেন এতোদিন তারা আঙ্গুল চুষেছে কীনা।
এরপর ওমর ফারুক চৌধুরীর আঙ্গুল চোষার ব্যবস্থা করা হয়। যুবলীগের নেতৃত্ব থেকে আউট হন এই বুড়ো যুবনেতা! এমন কী যুবলীগের সম্মেলনে তাকে দাওয়াতই করা হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে সম্রাটের সাম্রাজ্যের পতন চেয়েছেন নেপথ্যের অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে গ্রেফতারে টালবাহানা শুরু করেন! কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানসন থেকে সম্রাটের জিনিসপত্র সরানোর সুযোগ দেয়া হয়। সমালোচনার মুখে কুমিল্লা থেকে যখন তাকে সাগরেদ আরমান সহ গ্রেফতার দেখানো, হয় তখন সম্রাটের দরবার শূন্য। সামান্য একটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া ছাড়া আর কিছুই সেখানে পাওয়া যায়নি! অথচ সম্রাট গত নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন সহ ১৩ এমপির নির্বাচনের খরচ দিয়েছে। সে ক্যাসিনো খেলতো সিঙ্গাপুরে। সম্রাট সিঙ্গাপুর পৌঁছলে তাকে চাঙ্গি এয়ারপোর্টে রিসিভ করতো সেখানকার জুয়ার প্রভাবশালী এজেন্টরা।
যুবলীগ নেতা দাবি করা সশস্ত্র দেহরক্ষীদল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সরকারি ঠিকাদারির মোঘল জি কে শামীম সহ রুপন-এনু এদের ঘরে যে পরিমান নগদ টাকা-স্বর্নালংকার পাওয়া গেছে তা দেখেজেনে চমকে যায় দেশের মানুষজন। যে যেখানে চিহ্নিত ধরা পড়ছিল তাকে নৈতিক কারনে সে সব সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছিল। ব্যতিক্রম শুধু বিসিবির লোকমান। খালেদা জিয়ার সাবেক এই দেহরক্ষী লোকমান এই জমানায় বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপনের বন্ধু এই পরিচয়ে ক্যাসিনো বানিজ্যের পসার ঘটান। বিসিবি বস কেনো তাকে বহিষ্কার না করে তার প্রতি দূর্বল তা পরে জানা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায় পাপন নিজেও ক্যাসিনোয় জুয়ায় আসক্ত। বিদেশে গিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। লোকমান-পাপন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দেখে কিন্তু ক্যাসিনো বিরোধী হৈচৈ থেমে গেছে। বুদ্ধিমানরা বুঝে ফেলেছেন, এ নিয়ে আর হৈচৈ করা ঠিক হবেনা।
এভাবে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান থামিয়ে দিয়ে তাঁকে(প্রধানমন্ত্রীকে) যে ঠকানো হচ্ছে তা জানা গেলো সম্রাটের রাজকীয় জীবনযাপনের খবরে! জেলখানায় নয়, ‘বুকে ব্যথা’ নিয়ে গত দু’মাস ধরে হাসপাতালে সহি সালামতে বাস করছেন যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত সম্রাট। গত অক্টোবরের ৬ তারিখে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। এর একদিন পরেই তারা হাসপাতালে আনা হয়। সমালোচনার মুখে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তাকে জেলখানায় ফেরত নেয়া হলেও নভেম্বরে তাকে আবার নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে! সেই থেকে সম্রাট বাস করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। এখান থেকে তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে নিজস্ব ভূবনের সব কাজই চালাচ্ছেন! প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে ঠকাচ্ছে কারা? এদের ধরবে কে?
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা