ইন্দোর টেস্টে বাজেভাবে হারের পরও প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্ট মাত্র তিনদিনে ইনিংস ও ১৩০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় গোলাপি বলে প্রথমবারের মত খেলতে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এমনকি ভারতের জন্যও এটি প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট।
ইতোমধ্যে কলকাতা টেস্টের প্রথম তিন দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টেস্ট ম্যাচটিকে স্মরনীয় করে রাখতে ‘আনন্দের নগরী’ বানিয়ে গোলাপি আবরনে রাঙ্গিয়ে তোলা হয়েছে কলকাতাকে।
ঐতিহাসিক টেস্টটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। টস’এর আগে হেলিকপ্টার থেকে নেমে ইডেন গার্ডেনে দুই অধিনায়কের হাতে গোলাপি বল তুলে দিবেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপাররা।
আর বেল বাজিয়ে ম্যাচের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত। তাই ঐ টেস্টের সকল সদস্যকে দিবার-রাত্রির ম্যাচে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। সকল খেলোয়াড়দের সম্মান জানাবে সিএবি। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছিলেন বিসিসিআইর বর্তমান সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের দুই খেলোয়াড় আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল শাহরিয়ার রোকন ছাড়া অন্য সবাই ইতোমধ্যে কলকাতায় পৌঁছেছেন। ঐ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন বাংলাদেশের বুলবুল।
টেস্টকে সামনে রেখে পুরো শহরকেই যেন গোলাপি রঙ্গে সাজানো হয়েছে। ২২ তলা টাটা ভবন এবং ৪২তলা আরেকটি ভবনকে বর্নাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে।
দু’দলের কাছেই ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। তবে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে ভারত। কারন তাদের দলের অনেক খেলোয়াড়ই ঘরোয়া আসরে গোলাপি বলে খেলেছেন।
বাংলাদেশের ঘরোয়া আসরে ২০১৩ সালে এনসিএল’এ বাংলাদেশের একবার গোলাপি বলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলো। তবে সেই স্মৃতি এতোদিনে ভুলেও গেছে বাংলাদেশ।
কলকাতা টেস্টের আগে চারদিন গোলাপি বলে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।
তবে বড় বিষয় হচ্ছে টেস্ট স্কোয়াডে থাকা অনেকেই ভারতের টি-২০ দলে ছিলেন না। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ চলাকালীন ভারতের অনেক খেলোয়াড়ই গোলাপি বলে নিজের অনুশীলন সাড়তে পারে।
সংগত কারণেই বাংলাদেশের চেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়েই গোলাপি বলে টেস্ট খেলতে নামবে ভারত। গোলাপি বলে পেসাররা ভালো সুবিধা পেয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারতই।
কারন বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম পেস অ্যাটাক রয়েছে ভারতের। গোলাপি বলে বাউন্স ও সুইং ভালোভাবেই হয়ে থাকে। ভারতের পেসাররা সুইং ও বাউন্সে এখন বেশ দক্ষ। সেটির প্রমান তারা ইন্দোরে দিয়েছে।
ভারতের স্পিনাররা গোলাপি বল থেকে ভালো সহায়তা পাবে। তবে রাতে শিশিরের কারনে সমস্যাও হতে পারে। তবে উইকেট থেকে ভালো সুবিধাও পেতে পারেন স্পিনাররা।
এছাড়া টেস্টে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোন জয়ও নেই। ওয়ানডেতে পাঁচবার ও টি-২০তে একবার ভারতকে হারিয়েছে তারা। এরমধ্যে চলমান সফরে টি-২০ সিরিজে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১০টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে আটটি হেরেছে টাইগাররা। দু’টি ম্যাচ বৃষ্টির কারনে পরিত্যক্ত হয়।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এ পর্যন্ত ১১৬টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে মাত্র ১৩টি জয় পায় টাইগাররা। হারে ৮৭টি ম্যাচে। এরমধ্যে ৪১টিতে ইনিংস ব্যবধানে হারে। আর বাকী ১৬টি ম্যাচ ড্র হয়।
ভারত এখন অবধি ৫৪০টি টেস্ট খেলেছে। জিতেছে ১৫৬টি, হেরেছে ১৬৫টি ও ড্র করেছে ২১৭টি। একটি ম্যাচ টাই করেছে টিম ইন্ডিয়া।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ম্যাচ অনুশীলন এবং ম্যাচ প্রস্তুতির মধ্যে সব সময়ই অনেক বড় পার্থক্যের কথা স্বীকার করলেও বাংলাদেশ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সুতরাং দুই দলেরই সমান সুযোগ থাকছে। মুলত বাংলাদেশ দল এটাই কাজে লাগাতে চায়।
এদিকে, গোলাপি বল নিয়ে সংশয় থাকলেও, ইডেনে নেটে অনুশীলন করে নিজেদের মনের মধ্যে থেকে ভয় কিছুটা হলেও দূর করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বোলিং পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি বলেন, ‘ তারা সবাই এসজি বলের শুরুটা উপভোগ করবে। তাই বোলিং করাও উপভোগ্য হবে।’
ইন্দোরে দুই পেসার নিয়ে খেলেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ইডেনে তিন পেসার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা করছে সফরকারীরা। তৃতীয় পেসার হিসেবে দলে আসছেন আল-আমিন হোসেন। তাই একজন স্পিনার দল থেকে বাদ পড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুলের মধ্যে একজন খেলবেন।
ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে টেস্টটি। ইন্দোরে ব্যাট হাতে ব্যর্থ বাংলাদেশের ওপেনাররা। তাই ইমরুলের পরিবর্তে দলে সুযোগ পাবার কথা ছিলো সাইফ হাসানের। কিন্তু আঙ্গুলের ইনজুরির কারনে দল থেকে ছিটকে পড়েন সাইফ। তাই ব্যাটিং লাইন-আপ প্রথম টেস্টের মতই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা