আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই … গানের গীতিকার মাসুদ করিমের মৃত্যুবার্ষিকী ১৬ নভেম্বর। চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য দু’বার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনকারী রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের গানের প্রখ্যাত গীতিকার মাসুদ করিম খুব অল্প সময়েই বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। তাঁর গান এই সব প্রচার মাধ্যমে প্রতিদিন বাজতে থাকে। তিনি সহস্রাধিক গান লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্রের গানই সর্বাধিক।
কোনো কোনো চলচ্চিত্র তাঁর গানের জন্যই খ্যাতি পেয়েছে। শাহনাজ রহমতউল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, বশির আহমেদ, সৈয়দ আবদুল হাদী, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, খোন্দকার ফারুক আহমেদ, কাজী আনোয়ার হোসেন, কাদেরী কিবরিয়া, প্রবাল চৌধুরী, নার্গিস পারভিন প্রমুখ তাঁর লেখা গান গেয়ে বাংলা গানের জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন।
মাসুদ করিমের লেখা সিনেমার গান এখনও সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মুখে মুখে ফেরে। যেমন : আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো, যখন থামবে কোলাহল, সন্ধ্যার ছায়া নামে, তন্দ্রা হারা নয়ন আমার, শক্র তুমি বন্ধু তুমি, সজনী গো ভালোবেসে এতো জ্বালা, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে, তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছো মানুষ কিনা, শিল্পী আমি শিল্পী তোমাদেরই গান শোনাব ইত্যাদি।
আরও পড়ুন : আইন লঙ্ঘণকারী চলচ্চিত্রসমূহকে জাতীয় পুরস্কার প্রদানে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তামাকবিরােধী জোট
রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত গীতিকার মাসুদ করিম কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সন্তান। কুমারখালীর খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের নামের সঙ্গে মাসুদ করিমের নামও যুক্ত। ছোটবেলা থেকে মাসুদ করিম ঢাকাতেই বড় হন এবং কবি ও গীতিকার রূপে প্রতিষ্ঠিত হন।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পরে তিনি বেতারে প্রযোজক হিসেবে জীবনের কর্মক্ষেত্র শুরু করেন। চট্টগ্রাম বেতারে কাজ করার সময়ে তিনি সুপরিচিত গায়িকা দিলারা আলোকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির এক পুত্র ও তিন কন্যা। মাসুদ করিম দম্পতি ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় চলে আসেন।
ষাটের দশকের শেষ দিকে তিনি কিছুদিন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সেক্রেটারির কাজ করেছিলেন। পরে ঢাকায় স্থায়ীভাবে এসে গান লেখার কাজে সার্বক্ষণিক হয়ে যান। দীর্ঘদিন গান লিখেছেনও তিনি। ‘ইউনিক’ নামে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থাও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কয়েকটি সিনেমাও প্রযোজনা করেছেন।
নিশ্চুপ-নীরব কর্মী মাসুদ করিম তাঁর বিনয়ী স্বভাবের জন্য সকলের প্রিয় ছিলেন। উজ্জ্বল রঙের, বড় কালো চোখের, কালো কেশের মাসুদ করিমের ভাবের ঘোর ছিল প্রথম জীবনে কবিতায়, পরের জীবনে গানে। ষাটের দশক থেকে ঢাকা শহরে যে সংগীতের জগৎ তৈরি হয়েছিল মাসুদ করিম তার একজন উল্লেখযোগ্য সদস্য।
নব্বইয়ের দশকে আমেরিকায় অধ্যয়নরত একমাত্র ছেলেকে দেখতে সপরিবারে আমেরিকায় চলে যান। পরে কানাডায় ক্যান্সারে তাঁর মৃত্যু হয়। মন্ট্রিয়ালের কবরখানায় একটি গাছের নিচে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের গানের জগতের এক উজ্জ্বল মানুষ স্মৃতিবেদনা হয়ে সেখানেই মিশে আছেন।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা