প্রণব মজুমদার
বামনের ছেলে খেতে নেই পেঁয়াজ ! এমনটা শুনেই আসছি সেই ছেলেবেলা থেকে। পেঁয়াজের দাম যখন ১০০ উঠলো তখন থেকে তা খাওয়া বন্ধ আমারও। কারণ বাড়তি টাকা আমারও নেই! পেঁয়াজ আর গুলকেতিন তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম রীতিমতো তোলপাড় ! পেঁয়াজ নিয়ে রাজনীতির নোংরা খেলাও দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করলো ! মজুদদার, মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট নতুন নয়। তবে রমজানের আগে আমাদের দেশে পণ্যমূল্য বাড়ে এটাই লক্ষ্য করে আসছি আমরা !
সরবরাহের ঘাটতির অজুহাতে ৪০ টাকার পেঁয়াজ প্রায় সাত গুণ বেড়ে এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যা অতীতের কোন দাম বৃদ্ধির সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে! খোদ প্রধানমন্ত্রীও পেঁয়াজ খাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন বলে আমরা খবরের কাগজ মারফত জেনেছি! দুপুরে বসে কলাম ও ছোট গল্প লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলাম! বিকেলে ফেবুতে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখি লবনের ওপর একাধিক স্ট্যাটাস ! গুজব আস্তে আস্তে সংক্রমিত হচ্ছিল ! লবনের নাকি ব্যাপক ঘাটতি ! এমন খবর মতিঝিল পাড়ায়ও । গাড়ীর চালক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো ! কি ব্যাপার ? – স্যার লবনের কেজি নাকি ২০০ টাকা ? সবাই বলাবলি করছে ! ঘরে অনেকদিন ধরে লবন নেই ।
লবন ছাড়া তরকারি কেই বা খেতে পারে ? বেশ ভাবনায় পড়ে গেলাম। সাপ্তাহিক বাজার করার নির্ধারিত দিন ছিলো আজ। সন্ধ্যায় দু’টি আমন্ত্রণ ছিলো ! লবনের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির খবরে সে নিমন্ত্রণ বাদ দিয়ে ছুটলাম মহানগরের শান্তিনগর বাজার! গাড়ি থেকে নেমেই প্রথমেই মুদি দোকান । আমি মোল্লা লবন খেতে পছন্দ করি। সেটা একটি দোকানেই পেলাম! দোকানী বললো একদাম ১১০ টাকা ! আশে পাশে পর্যবেক্ষণ করলাম অনেকে মোটা লবন খুঁজছে। বুঝলাম লবন সংকট তৈরির গুজব এ বাজারেও ছড়িয়েছে ! মাছ বাজার থেকে চার পদের মাছ কিনে গেলাম চাঁদপুর স্টোরে নেসারের মুদি দোকানে তেল, আলু, আদা কেনার পর দোকানি শরীফকে বললাম মোল্লা সল্ট দাও । -মোল্লা সল্ট মার্কেট আউট স্যার !
আরও পড়ুন : গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৯০ জন
এসআই পিউর সল্ট এগিয়ে দিয়ে বললো ৪০ টাকা দিয়েন ! বললাম পণ্যের গায়ে লেখা ৩৫ ! তুমি ৫ টাকা বেশি চাচ্ছি কেন ? পরে শরীফ লবন বাবদ ৩৫ টাকাই লাগলো ! এদিকে ফেবুতে দেখলাম লবন গুজব নিয়ে সরকারের প্রশাসনের সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসেছে ! পরিসংখ্যান ও উপাত্ত উল্লেখ করে দেশে লবনের কোন ঘাটতি নেই তার সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরছে । গুজবে কান দিতে নেই ! তা বলা হলেও সবাই সেদিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দ্রব্যমূল্যের বাজারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে ।
দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার তদারকি করার জন্য সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ! মূল্যবৃদ্ধির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং অতি মুনাফালোভী ব্যবসাায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে ! এ জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, টিসিবি এবং বিএসটিআইকে সমন্বিতভাবে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। চাই বাজারে নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা ।
সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, আমদানি, ঘাটতি, ঋণপত্র (এলসি) ইত্যাদির যাবতীয় তথ্য জনমুখী মাধ্যমে প্রচার এবং বিদ্যমান আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা । আর গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করাও সময়ের দাবী বলে মনে করছি। আমরা চাই দ্রব্যমূল্যের বাজারের শৃঙ্খলাও! কেননা এ বাজারের নিয়মিত প্রয়োজনীয়তার সংশ্লিষ্টতা সবার আগে সকলের কাছেই বিবেচ্য ।
# লেখক সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
# ১৯ নভেম্বর, ২০১৯
সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা, reporterpranab@gmail.com
ফেসবুক
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা