সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : পরষ্পর দোষারোপ ও বাগারম্বর পরিহার করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হাসপাতালসমূহে সক্ষমতা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
সােমবার (১৬ মার্চ) জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারী রূপ নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বাংলাদেশে এই রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৬ লাখের বেশি প্রবাসী করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। অথচ আইইডিসিআরের সর্বশেষ সংবাদ ব্রিফিং-এ বলা হয়েছে মাত্র ২৩১৪ জনকে হোম কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হয়েছে। এতে সরকারি তথ্যের বিরাট গরমিল দেখা যাচ্ছে। ফলে দেশবাসীর প্রশ্ন বাকী যারা এসেছে তাদের অবস্থা কি এবং তারা কোথায়?
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইউরোপে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখার কথা বলেছে, সেই একই হোম কোয়ারাইন্টাইনে আমাদের দেশে থাকতে বলা একটি অবাস্তব বিষয়। যা ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, যাদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে তাদের অনেকেই রীতিমতো স্বাভাবিক মানুষের মতো বাজার-ঘাট করছে, হোটেল-রেস্তোরায় যাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে, গণপরিবহনে ভ্রমণ করছে। ফলে উন্নত দেশের নকল না করে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় চীনের মতো রাতারাতি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ না করতে পারলেও জরুরি বরাদ্দ দিয়ে অবস্থিত হাসপাতালসমূহে করোনা ইউনিট স্থাপন এবং প্রয়োজনে কমিউনিটি সেন্টার বা খোলা মাঠে অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ডিসেম্বর থেকে চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ২৭ জানুয়ারি সারাদেশে ৮ বিভাগের সকল জেলা সদরের হাসপাতাল ও সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আইসোলেশন ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হলেও গতকাল ১৫ মার্চ পর্যন্ত খোদ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়নি বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়হীনতার নিকৃষ্ট উদাহরণ।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণকে গুরুত্ব দেয়নি। আবার বলা হচ্ছে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতাল প্রস্তুত। বাংলাদেশ করোনা প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিত্র প্রমাণ করে সরকারের এ দাবি নিছক বাগারম্বর ছাড়া আর কিছুই না। তাছাড়া সংবাদে প্রকাশ, দেশে করোনা সনাক্তকরণ কীট রয়েছে মাত্র ২০০০টি। যা খুবই অপ্রতুল মরুভূমিতে এক বিন্দু শিশিরের মতো। ফলে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সরকারের এহেন তামাশা ও বাগারম্বর অবিলম্বে বন্ধ করে, সমন্বয়হীনতা দূর করে, পর্যাপ্ত কীট সংগ্রহ করে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, একদিকে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ অন্যদিকে ঢাকা-কুড়িগ্রামসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, নির্যাতন চলছে। ঢাকার মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৩২ জনের নামে মামলা, যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার দেয়ায় ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ১০ মার্চ থেকে নিখোজ হওয়া, কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে রাতের বেলায় ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে গ্রেপ্তার ও অমানুষিক নির্যাতন সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে চরম হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকার বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ ও জনগণের কণ্ঠ রোধ করে দেশে নব্য বাকশালী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। র্নীতির খবর প্রকাশ করায় প্রতিহিংসাপরায়নকারী কুড়িগ্রামের ডিসি, আরডিসিসহ ঘটনায় যুক্ত সকলকে শুধু প্রত্যাহার নয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ফটো সাংবাদিক ও ‘পক্ষকাল’ পত্রিকার সম্পাদক ৬দিন ধরে নিখোজ শফিকুল ইসলাম কাজলকে অবিলম্বে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। একই সাথে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৩২ জন সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন।
বিবৃতিতে করোনা মোকাবেলায় সকল দেশবাসীকে সচেতন করা ও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আহ্বান জানানো হয় এবং বাম জোটের সকল নেতা-কর্মীসহ সকলকে জনগণকে সচেতন করা ও সতর্ক থাকার জন্য কর্মসূচি গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের শীর্ষ নেতা সিপিবি’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা