সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামের পটিয়া প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) এর চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী যৌন হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এই ঘটনার সাথে জড়িত চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনে ব্যবস্থা গ্রহন এবং দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে নারী অধিকারের সঙ্গে জড়িত সংগঠনটি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ১০ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় “৫০ জনকে যৌন হয়রানি, ৪ প্রশিক্ষক প্রত্যাহার” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি যে, চট্টগ্রামের পটিয়া প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) এর চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী পটিয়া পিটিআইতে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায় যে, প্রাথমিক শিক্ষকদের পাঠদান ও নীতিনৈতিকতা বিষয়ে শিক্ষা দেয় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)। সেই পিটিআইয়ে নারী প্রশিক্ষণার্থীরা দিনের পর দিন শরীরচর্চার প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন, চারু ও কারুকলার সবুজ কান্তি আচার্য, সাধারণ বিভাগের জসিম উদ্দিন ও আইটির রবিউল ইসলাম এই চার প্রশিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন অন্তত ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী। পটিয়া টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) প্রশিক্ষক দেবব্রত বড়ুয়ার কাছে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার প্রক্ষিণার্থীরা মোখিকভাবে জানায় এবং ওই প্রশিক্ষক এ বিষয়ে চার সহকর্মীকে ঘৃন্য কাজ থেকে নিবৃত করার চেষ্টা ও প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি লিখে গত ০৬ মার্চ শুক্রবার রাতে প্রশিক্ষক দেবব্রত বড়ুয়ার আত্মহত্যাচেষ্টর পর নারী নির্যাতনের এই ঘটনা সামনে আসে।
উল্লেখ্য, পটিয়া টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) এর মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ বন্ধে কোন অভিযোগ কমিটি নাই। প্রশিক্ষণার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ০৮ মার্চ চার প্রশিক্ষককে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক রাশেদা বেগমকে প্রধান করে যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই গত ০৯ মার্চ তরিঘড়ি করে যৌন হয়রানির বিষয়টি উপেক্ষিত রেখে তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর জমা দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের নারী প্রশিক্ষণার্থী এবং বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হচ্ছে। যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থী, কিশোরী, তরুণী ও নারীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। কখনো কখনো শিক্ষার্থী, কিশোরী, তরুণী ও নারীরা যৌন হয়রানির অপমান সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। আবার এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা বখাটেদের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে নারী ও কন্যাশিশু নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং তাদের স্বাধীন চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। যা দেশে সফল অগ্রযাত্রায় বাধার সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্তকরণ বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের আলোকে পৃথক আইন তৈরিসহ রায়ের বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন, দ্রুত গ্রেফতারসহ যথাযথ শাস্তি নিশ্চিকরণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। সেইসাথে নারীর সার্বিক নিরাপত্তা, স্বাধীন চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছে। সেই সাথে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে সারাদেশে এ ধরণের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা