মো. আলী আশরাফ খান
যে কারণে গর্ভাবস্থায় আয়োডিন অতীব জরুরি অনাগত সন্তানের স্বাভাবিক জন্ম ও সুস্থ বিকাশ আমাদের সবারই কাম্য। হাল আমলের বাবা-মায়েরা এ ব্যাপারে খুব সচেতন। তাই স্বাস্থ্যবান সন্তান জন্মের লক্ষ্যে গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের হার বেড়েছে। গর্ভকালীন সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হচ্ছে আয়োডিন। অথচ আয়োডিনের ব্যাপারে এখনো অনেকেই তেমন সচেতন নন। ফলে হামেশাই নবজাতকের দেহে আয়োডিনের অভাবজনিত জটিলতা দেখা দিচ্ছে। চলুন আয়োডিনের গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জেনে নেই-
১.নবজাতকের মস্তিষ্কের গঠন ও বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সাধনে আয়োডিনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়োডিনের অভাব শিশুর বিকাশ ও শেখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়।
২. আমাদের বিপাক, বৃদ্ধি ও বিকাশের পেছনে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর এই হরমোনসমূহ তৈরির প্রধান কাঁচামালই হচ্ছে আয়োডিন।
৩. আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগ ছাড়াও অবসাদ, স্থুলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা এসব হতে পারে। এছাড়া আয়োডিন স্বল্পতায় ত্বকের শুষ্কতা বাড়তে পারে, ভঙ্গুরতা দেখা দিতে পারে নখে।
৪.আয়োডিন স্বল্পতার প্রধান ঝুঁকিটা গুর্ভাবস্থায়। গর্ভধারনের আগে থেকে শুরু করে গর্ভধারণের পর প্রথম ৪ মাস সময় পর্যন্ত মানবভ্রূণ থাইরয়েড হরমোনের জন্য সম্পূর্ণরূপে মায়ের উপর নির্ভর করে। মায়ের দেহে থাইরয়েড হরমোন তথা আয়োডিনের স্বল্পতা তার মস্তিষ্ক ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশকে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। হতে পারে ক্রেটিনিজম নামের রোগ।
৫.স্বল্প থেকে মাঝারি মানের আয়োডিন ঘাটতিই ভ্রূণমস্তিষ্কের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতির জন্য দায়ী। স্বাস্থ্য সাময়িকী Lancet পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, আয়োডিন স্বল্পতায় ভোগা মায়েদের সন্তানরা নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে সবসময়ই পিছিয়ে থাকে। আট বছর বয়স পূর্ণ হওয়া অব্দি তাদের বুদ্ধিমত্তার হার অন্য বাচ্চাদের মাত্র ২৫ ভাগ।
আমাদের দেহ আয়োডিন তৈরি করতে পারেনা। তাই চাহিদার পুরোটাই যোগান দিতে হয় বিভিন্ন খাবারের সাথে। আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় শীর্ষেই আছে বিভিন্ন ধরনের মাছ (প্রধানত সামুদ্রিক) ও দুগ্ধজাত পণ্য। তবে খামারের গরুর দুধে আয়োডিন তেমন থাকেনা বললেই চলে। কারণ খামারের ঘাস ততোটা আয়োডিনসমৃদ্ধ নয়। আবার গরমের সময় দুধে আয়োডিনের পরিমান কমে যায়। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, আয়োডিনযুক্ত লবন ব্যবহার করেই আয়োডিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের কি আলাদা করে আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন আছে?
একজন সাধারণ পূর্ণবয়স্ক মহিলার দৈনিক আয়োডিনের চাহিদা ১২০ মাইক্রোগ্রাম। গর্ভাবস্থায় যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০ মাইক্রোগ্রামে। এই বাড়তি চাহিদা মেটাতে হলে মা’কে অবশ্যই বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে। সাধারণত স্বাভাবিক খাবার লবন ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেই গর্ভকালীন চাহিদা মিটে যায়।
তবে আয়োডিনযুক্ত খাবার লবন না পাওয়া গেলে গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারি মায়েদের আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা প্রয়োজনের বেশি আয়োডিন গ্রহণে থাইরয়েড হরমোনজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে।
# লেখক, মহাব্যবস্থাপক (অবসরপ্রাপ্ত), বিসিক।
ফেসবুক : চলবে …
আরও পড়ুন : বাংলাদেশি ছাড়া কাউকে সীমান্ত দিয়ে দেশের মাটিতে ঢুকতে দেয়া হবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা