উগান্ডা ঘুরে আসা কর্মকর্তাদের কয়েকজন বলেছেন, তাঁরা সেখানে সড়কে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি দেখেননি। নগর পরিচালনা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয় বলে তাঁদের জানানো হয়। উগান্ডা সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিডব্লিউএসআইএসপির উপপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারিগরি দিক থেকে পানি ব্যবস্থাপনায় উগান্ডা আমাদের চেয়ে উন্নত না হলেও অফিস ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। চট্টগ্রাম ওয়াসায় এসব বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।’ প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট না হয়েও মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সফরে যাওয়ার বিষয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) অনুমোদনের সময় তাঁদের সফরে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি উল্লেখ ছিল। জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই উগান্ডায় গেছেন কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাংক সিডব্লিউএসআইএসপি–তে ঋণ দিয়েছে। তারাই বলেছে প্রশিক্ষণের জন্য উগান্ডায় যেতে হবে। চার ভাগে উগান্ডায় উগান্ডায় যাওয়া ৪১ কর্মকর্তা–কর্মচারীর মধ্যে ২৭ জন ওয়াসার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারী। অন্যরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা। ২০১৬ সালে প্রথম দফায় আট দিনের সফরে উগান্ডা যান ওয়াসার চার কর্মচারী সংগঠনের আটজন নেতা। চার সংগঠন হলো শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, নির্দলীয় শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং সরকারদলীয় পরিচয় দেওয়া চট্টগ্রাম ওয়াসা এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। এরপর ২০১৭ সালের ১৫ থেকে ২৪ ডিসেম্বর দেশটি সফর করেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে আটজন ওয়াসার কর্মকর্তা। অন্যদের মধ্যে ছিলেন তখনকার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের সাতজন কর্মকর্তা। চলতি বছরের ২৬ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত উগান্ডা সফরে যায় তিন সদস্যের ওয়াসার তৃতীয় দলটি। সর্বশেষ ১৩ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশটি সফর করেন ওয়াসার আটজন এবং বিভিন্ন দপ্তরের সাতজন কর্মকর্তা। গেছেন নেদারল্যান্ডসও একই প্রকল্পের অধীনে ওয়াসা, মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তরের ১৫ কর্মকর্তা গেছেন নেদারল্যান্ডসেও। এ প্রকল্পের অধীনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ‘ইউনিস্কো–আইএইচই’ নামের নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠানও। দুই ভাগে সে দেশে সফর করেছেন ওয়াসার সাতজন কর্মকর্তা। অন্যরা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের। চট্টগ্রাম ওয়াসায় মোট কর্মকর্তা আছেন প্রায় ৫০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন এই প্রকল্পের অধীনে দুটি দেশে গেলেন। বাংলাদেশ ও উগান্ডার যত পার্থক্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিশুদ্ধ পানির প্রাপ৵তা নিশ্চিতে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াটার ডট ওআরজি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, উগান্ডার ৬১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত এবং ৭৫ শতাংশের উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুবিধা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার আর উগান্ডার মাত্র ৭২৫। বাংলাদেশের পুরুষ ও নারীর গড় আয়ু যথাক্রমে ৭০ দশমিক ৮ বছর ও ৭৩ দশমিক ৮ বছর। উগান্ডার পুরুষ ও নারীর গড় আয়ু যথাক্রমে ৫৪ ও ৫৫ বছর। তবে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ও উগান্ডার অবস্থান সমান্তরাল। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের গত ২৯ জানুয়ারির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে দুটি দেশেরই অবস্থান ১৩। উগান্ডার মতো একটি অনুন্নত দেশে ওয়াসার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি বা সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রামের সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, উগান্ডা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় সব দিক থেকে পিছিয়ে। এমন একটি দেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের কী অর্থ? আকতার কবির চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ ঠিকমতো পানি পাচ্ছে না, বারবার খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণায় সারা বছরই অতিষ্ঠ থাকে, আর কর্মকর্তারা আছেন প্রশিক্ষণের নামে জনগণের টাকা লুটপাটে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের নজর দেওয়া দরকার।