পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র আমাদের বাংলাদেশের বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই করছে। কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে সরকারগুলো বাংলাদেশক বিশ্বের কাছে তেমন পরিচিত করতে পারে নি। যার ফলে বাংলাদেশকে সাড়া দুনিয়ার মানুষ তো দূরের কথা, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর লোকজনও এই সুন্দর দেশটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। যতটুকুই জানে তা শুধুমাত্র নেতিবাচক দিকগুলোর জন্য। কিছুদিন আগে বৃহত্তর ম্যানচেস্টারের মেয়রের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। অন্য অনেক কথার সাথে উনি বলেছিলেন যে যখনই দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে কথা হয় মানুষ চীন, ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে বলে, কিন্তু লোকসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্ঠম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশের কথা তেমনভাবে আসে না। এর দায় সার্বিকভাবে সরকারের হলেও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়টাই সবচেয়ে বেশী বলে আমার ধারণা। দেশের বাইরে বাংলাদেশীদের গর্বিত করার সরকারগুলোর সীমাহীন ও অমার্জনীয় ব্যর্থতার পরও চারটা বিষয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। সেগুলো হলো: সুন্দরবন, ক্রিকেট, তৈরী পোশাক এবং নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস। কিন্তু, আমরা আমরা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে এগুলোরও তেরটা বাজিয়ে দিচ্ছি। সুন্দরবনের আমরা কি করেছি এবং করছি সেটা বোধহয় বিস্তারিত না লিখলেও চলবে। একটা কথা কেবল উল্লেখ করি। তর্কের খাতিরে আমি মেনে নিচ্ছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প সুন্দরবনের তেমন কোন ক্ষতি করবে না। তারপরও আমি বলবো যে দেশে বহু স্থান আছে যেখানে এই প্লান্ট স্থাপন করা যেতো। বিশ্ব পর্যায়ে একমাত্র ক্রিকেটেই লোকজন আমাদেরকে গুনে। সেই ক্রিকেটকেই আমরা এখন মোটামুটি তামাশায় পরিণত করছি। ক্রিকেট নিয়ে বর্তমানে যা হচ্ছে তা নিয়ে বলতেই আমার লজ্জা হচ্ছে। কিন্তু, একজন ‘এমপি’ ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ছেলের সেই লজ্জাবোধ নেই। বড়ই আফসোস। ক্রিকেটারদের দাবীর প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। সেই সাথে আমি তাদের আন্দোলনের সমালোচনাকারীদের বলছি যে তারা ‘পেশাদার’ আন্দোলনকারী নয়। তারা কেবলমাত্র তাদের মনের কথা বলছে। ব্যাস। অনেকে বলছেন ক্রিকেটাররা অনেক টাকা বেতন পান। কিন্তু, তারা কি এটা ভেবেছেন যে এই খেলোয়াররা ক্রিকেট বোর্ডের জন্য কত টাকা আয় করছেন। তাদের বেতন-ভাতা তোসেই আয় অনুযায়ী হওয়ার কথা। বাই দা ওয়ে, খুব জানতে ইচ্ছে করে পাপন সাহেব ও তার চেলারা কত বেতন পায়? বাংলাদেশে যে কয়েকজন লোককে আমি ভালোবাসি মাশরাফি তাদের অন্যতম। আজকের এই অবস্থায় ছেলেটাকে খুব মিস করছি। আকুল অনুরোধ জানিয়েছিলাম ও যেন বাংলাদেশ দলে খেলা অবস্থায় রাজনীতিতে যোগ না দেয়া। কিন্তু, শুনলো না। হয়ে গেলো একটা দলের অবৈধ এমপি। সাথে হারালো অনেক মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা। ও যদি আজ ক্রিকেট নেতৃত্বে থাকতো, দৃশ্যটাই অন্যরকম হতো। তৈরী পোশাকে আমরা এখনও মোটামুটি শীর্ষ পর্যায়ে। কিন্তু, এটা আমরা কতদিন ধরে রাখতে পারবো সেটাই হলো কথা। গত দুই বছর পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে এই শিল্প নিয়ে কতোধরণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু, আমরা সাবধান হচ্ছি না। সবশেষে আসা যাক ড. মোহাম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গে। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে বা নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে আমার তেমন আলাদা মোহ নেই। তবে, এই পুরস্কারটার বিশ্বব্যাপি প্রভাব সম্পর্কে আমি খুবই সচেতন। সোনার বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করার ‘অপরাধে’ আমাকে একবার আমস্টারডাম বিমানবন্দরে আলাদা করে ফেলা হলো অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে বললেন, ‘ওহ, তুমি ড. ইউনূসের দেশের!’ পাসপোর্টটা একটু ঘেটেঘুটে বললেন, ‘তুমি যেতে পারো। যন্ত্রণা দেয়ার জন্য দুঃখিত।’ ইন্দোনেশীয় দ্বীপ বালি বিমানবন্দরেও মোটামুটি একই অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। কঠিন হলেও বাস্তবতা হচ্ছে যে বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত হওয়ার খুব কম বিষয়ই আছে আমাদের। কিন্তু, সেই সামান্য বিষয়গুলোও আমরা হারাতে বসেছি কিছু লোকের কারণে। দেশের স্বার্থে এই প্রবণতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অতি জরুরী হয়ে পরেছে।
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, লেখক : কূটনৈতিক প্রতিবেদক। তার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা