দেশে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানা গেছে।
মহিলা পরিষদ তাদের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় যে, বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে শিশু, কিশোরী ও তরুণীদের ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
ঢাকার ধামরাইয়ে ডাইটিয়া এলাকায় প্রতীক চিরামিক কারখানার নারী শ্রমিককে চলন্তবাসে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় যে, নির্যাতনের শিকার নারী শ্রমিক প্রতিদিন কারখানা কর্র্তৃপক্ষ নিয়োজিত বাসে তার কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর চারটার দিকে ওই নারী শ্রমিক ধামরাইয়ের ওই সিরামিক কারখানায় কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাঠাঁলিয়া থেকে বাসে ওঠেন। ওই দিন কাজ শেষে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোজঁখবর নিয়ে না পেয়ে ধামরাই থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। ওই দিনই আনুমানিক রাত দেড়টা দিকে হিজলিখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পশ্চিম পাশের এটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে পুলিশ ওই নারী শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে এবং বাস চালক ফিরোজকে গ্রেফতার করে।
ঢাকা মহানগরীর রামপুরা এলাকায় দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় যে, ওই দুই তরুণী রামপুরা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। পাশেই একটি বাসায় রান্না করে মেসে খারাব সরবরাহ করতেন বাবুর্চি মুশফিক আলম এবং তিনি ওই তরুনীকেও খারাব সরবরাহ করতেন। গত ০১ জানুয়রি ও ০৯ জানুয়ারি বাবুর্চি মুশফিক আলম দুই তরুণী তার বাসায় খারাব খেতে গেলে তাদেরকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার তরুনীরা থানায় মামলা করেছেন এবং বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছেন।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় যে, গত ০৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় বান্ধবীর সহযোগিতায় ডেকে নিয়ে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার কিশোরীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছেন।
ঢাকার ভাটারা এলাকায় কিশোরীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় যে, গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভাটারা এলাকায় পারিবারিক কাজে গারো কিশোরী বাসায় বাইরে যায় এবং কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাত ১০ টার দিকে সে নিখোঁজ হয়। পরিবারের সদস্যরা রাতভর তাকে বিভিন্ন এলাকায় খুজাখুজি করে এবং পরবর্তীতে ওই দিন ভোরে ৫টার দিকে ভাটার এলাকায় একটি রাস্তার মোড়ে ওই কিশোরীকে রক্তাক্ত, জখম ও আশঙ্খাজনক অবস্থায় পথচারীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুর স্ট্যান্ড এলাকায় থেকে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রীকে অপহরণ করে দু’দিন আটকে রেখে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় যে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ৯ম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে গত ০৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার গন্ধর্বপুর ষ্ট্যান্ড থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় তৌসিব, তানভীর, সোহাগ ও আফজাল নামের চার তরুণ তাকে দুদিন আটকে রেখে তারা গণধর্ষণ করে রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
যশোর জেলার অভয়নগর থানধীন দেয়াপাড়া গ্রামে ৭ম শ্রেনীর স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় যে, গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে মা-বাবা কাজে বাড়ির বাইরে থাকায় ৭ম শ্রেনীর স্কুলছাত্রীকে একা পেয়ে বাড়িতে ঢুকে এলাকার হাফিক খানের ছেলে রিয়াজ খান ও তার দুই সহযোগীরা ওই স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। পরবর্তীতে প্রতিবেশিরা অসুস্থ অবস্থায় স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আমরা লক্ষ্য করছি যে, সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনবৃদ্ধিসহ শিশু, কিশোরী, তরুণীরা ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের পর হত্যা, বর্বর লোমহর্ষক ঘটনা আশঙ্খাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসকল ঘটনায় আমাদেরকে উদ্বিগ্ন ও আত্মকিত করে তুলছে। সারাদেশের বিভিন্ন সড়ক মহসড়কে গণপরিবহনে একের পর এক নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কোন সুস্থ সমাজের পরিচায়ক নয়। এধনের ঘটনা নারীর স্বাধীন চলাচল ও দেশের অগ্রযাত্রায় নারীর অংশগ্রহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সড়ক ও মহাসড়কের গণপরিবহনে নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তাসহ নারীর স্বাধীন চলাচল নিশ্চিতকরণের দাবি করছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় শিশু, কিশোরী ও তরুনীদের ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। সেইসাথে ধর্ষণের বিরুদ্ধে শূণ্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ সাপেক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কারণ উদঘাটন করে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে আশু কার্যকর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছে।
উপরে উল্লেখিত ঘটনাসমূহের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতকরণসহ নির্যাতনের শিকার শিশু, কিশোরী ও তরুনীদের সুচিকিৎসাসহ তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছে। সেইসাথে সারাদেশে সংঘটিত নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা