উন্নয়ন মানে জীবনের উন্নয়ন। তাই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে মানুষ হিসেবে নারীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। নিরাপত্তা, মজুরী, স্বীকৃতি, অধিকার, প্রয়োজন সবক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের স্বীকার। নারীরপ্রতিসকল বৈষম্য দূর করে নারীর সার্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট অঙ্গিকারের দাবি করেছেন বক্তারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবর্ষে নারী অধিকার এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করে নারীর প্রতি চলমান সকল বৈষম্য ও নারী-শিশু ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন দূর করার আহ্বান জানানো হয় এ সেমিনারে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সেমিনারে ‘‘নারীর ভূমি অধিকার, কৃষিতে অংশগ্রহণ এবং নারীর সার্বিক নিরাপত্তা’’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে এএলআরডি। সকল শর্ত বিলোপ করে প্রান্তিক নারীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বণ্টন নীতিমালাটি পরিবর্তন করে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে সেমিনারে।
পাশাপাশি, বেহাত হয়ে যাওয়া খাসজমিও পুনরুদ্ধার করে তা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য জোর দাবি তুলেছেন সেমিনারের বক্তারা।
এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি। প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সীমা জামান এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি সোহরাব হাসান।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত তৃণমূলের সংগঠিত নারীদের মধ্যে রাঙ্গামাটির নারী ভৌমিকা কার্বারি, সুলেখা দ্রং, নাসিমা আমিন, কাউন্সিলর (সংরক্ষিত মহিলা আসন) রংপুর, নিগার সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ সদর প্রমুখ তাদের বৈষম্য, বঞ্চনা ও দাবির কথা তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে নারীর ভূমি অধিকার, কৃষিতে অংশগ্রহণ, মজুরী বৈষম্য এবং নারীর সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ দিনে দিনে বাড়ছে এবং পুরুষের সম্পৃক্ততা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। বিগত ৭ বছরে কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিতে নারীর সর্বাধিক অবদান থাকা সত্ত্বেও নারীর কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি নেই, বাজার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ নেই, ভূমিতে মালিকানা, প্রবেশাধিকারও নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ, পরিসংখ্যান বলছে নারীর হাতে জমি থাকলে সেই পরিবারের দারিদ্রের হার কম থাকে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি জরিপে বলা হয়েছে যে নারী প্রধান পরিবারে তুলনামূলকভাবে দারিদ্রের হার কমছে (নিম্ন দারিদ্রসীমা ১৪.৬ শতাংশ) এবং ক্রয় সক্ষমতা বাড়ছে। বিপরীতে, পুরুষ পরিচালিত পরিবারে দারিদ্রের (নিম্ন দারিদ্রসীমা ১৭.৯ শতাংশ) হার বেশি। পুরুষের তুলনায় নারীরা দীর্ঘ সময় কাজে নিয়োজিত থাকার পরও তাঁরা মজুরী বৈষম্যের শিকার। অপরদিকে, নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনায় বিচার না পাওয়া নারীর প্রতি পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারীবান্ধব সুশাসনের অভাবকেই প্রকট করে তুলছে। গত কয়েক দশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নারীর উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখা গেলেও নারীবান্ধব সুশাসনের অনুপস্থিতি এবং নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা এই অর্জনগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে এএএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, আমাদের সমস্ত অর্জন ও গৌরব ম্লান হয়ে যায় যখন প্রতিনিয়ত আমরা দেখি নারীরা ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ‘‘কৃষি ও ভূমিই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড’’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এদেশের কৃষিকে নারীরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন। খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালায় খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সক্ষম পুত্রসহ বিধবা নারীর শর্তটি বৈষম্যমূলক ও অবমাননাকর বলে উল্লেখ করে তিনি অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা