লাইলী বেগম : ‘নারীবাদী হওয়াটা গর্ভধারণ করার মতো ব্যাপার। হয় তুমি গর্ভবতী অথবা তুমি গর্ভবতী নও। হয় তুমি পুরুষ ও নারীর সমতাকে বিশ্বাস করো, অথবা করো না।’
Thank you Bithy Soptorshi তোমার অনুবাদের জন্য। যদিও বইটি বাইন্ডিং করতে খুবই এলোমেলো করেছে পৃষ্ঠা। Thank you ‘Chimamanda Ngozi Adichie’. এমন চমৎকার একটা বই লেখার জন্য।
‘নারীবাদী প্রস্তাবনা’ বইটি নারীবাদকে ছোট ছোট ঘটনার বর্ণনায় পাঠককে স্পষ্টতা দেবে।
একটা ঘটনার বর্ণনা করতেই হয়। ঘটনাটি পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে ঘটেছিল। গতবছর আমি মারাত্মক অসুস্থতা নিয়ে দিল্লির হাতপাতালে ভর্তি হই। আমার সাথে এটেন্ডেন্ড ছিল আমার মেয়ে। আমার যেহেতু সার্জারি হবে স্পাইনাল কডে, সার্জারিটাও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ, মেয়েটাও প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে যাচ্ছে, কি পরিস্থিতিতে পড়বে, সামলাতে কতটা হিমশিম খাবে এমন চিন্তা থেকে আরো একজনকে সাথে নিতে চাই। কিন্তু পরিবারের কারো ছুটি নেই তো কারো ভিসা নেই এমন সংকটে বাধ্য হয়ে আমার সংগঠন উদীচীর এক ছোট ভাইকে সাথে নিলাম। ছোট ভাইটি ঠিক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বড় বোনের নিরাপত্তার তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া পাহারাদারের মতো।
কিন্তু দিল্লিতে? তার ভাষা সংকট। ইংরেজি জানে না। হিন্দি আধাআধি বুঝতে পারে। কিন্তু বলতে গেলে পুরাই তালগোল পাকিয়ে ফেলে। পথ-ঘাট অচেনা, ভাষা সমস্যা নিয়ে আমরা মা- মেয়ের টেনশনের পুরোটাই তাকে ঘিরে। হারিয়ে গেলে সমস্যা চরমে উঠতে পারে। কিন্তু যখন কিছুটা সুস্থ হয়ে আমরা হোটেলে উঠলাম, হোটেলের লবিতে ম্যানেজার যেন আমি ও আমার মেয়েকে দেখছেনই না। সেই ছোট ভাইকে ‘স্যার’ ‘স্যার’ করে অস্থির। তার সাথেই সব আলাপ। সে বুঝতে পারছে না, বোঝাতে পারছে না, বার বার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। তবুও ম্যানেজার ‘স্যার’র মুখের দিকেই তাকিয়ে। যতদিন হোটেলে ছিলাম ম্যানেজার ‘স্যার’ ‘স্যার’ করেই গেছে। চলে আসার সময় আমি নিজে বিল মিটাইলাম। কিন্তু ধন্যবাদ ‘স্যার’কে দিল। ততদিনে ছোট ভাই কিছুটা বুঝতে ও বলতে শিখেছে।
যখনই কোন রেষ্টুরেন্টে গেছি একই পরিস্থিতি দেখেছি। টেক্সি ড্রাইভার, উবার ড্রাইভার সবাই আমার ও আমার মেয়ের হাত থেকে টাকা দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানায় ‘স্যার’কে।
তখন খুব মনে হয়েছিল, নারীর অভিভাবক মনে করা হচ্ছে পুরুষটিকে। তাই সকল আলোচনা ও সিদ্ধান্ত পুরুষটিকেই নিতে হবে এমন ধারণা থেকে আমরা মা- মেয়ে গৌণ হয়ে উঠেছি। যদিও টাকা আমরা ব্যাগ থেকে পরিশোধ করেছি, তারা ধারণা করেছিল টাকার মালিক পুরুষই। তাই ধন্যবাদ পুরুষেরই প্রাপ্য।
এমন অনেক ছোট ছোট ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আছে বইটিতে। যা পড়লে মনের সংকট কমে যাবে। বুঝতে সহজ হবে নারীবাদের ধারণা।
অনেকে, যারা নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতৃত্ব দেন, তারাও মাইক হাতে নিয়ে মিনমিন করে বলেন,’ আপনারা আমাদের ভুল বুঝবেন না। আমরা নারীদের নিয়ে কাজ করি ঠিকই, কিন্তু আমরা নারীবাদী নই।’ এই নারীরা নিজেরাই বিশ্বাস করে নারীবাদ ভালো কিছু নয়। ‘নারীবাদী’ শব্দটি একটি গালি। তারা আরো দু’কাঠি সরস। তারা সুযোগ পেলে একথাও বলেন, ‘আমরা তসলিমা নাসরীন নই। আমরা নারীবাদী হতে যাবো কোন দুঃখে!’ বইটি পড়লে সেই নেতা নারীরাও সাহস ও বিশ্বাস নিয়ে বলতে শিখবে ‘আমিও নারীবাদী’। আমরাও নারীবাদী। অবশ্য যদি বইটি তাদের মগজে কোন জায়গা পায়। সেসব পুরুষও নিজেকে নারীবাদী বলে ঘোষণা দিতে কুণ্ঠিত হবেন না, যারা নারী- পুরুষের সমতায় বিশ্বাস করেন।
#লেখক, সাংবাদিক, সালমা সোবহান ফেলো, কুড়িগ্রাম।