শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে বহুল আলোচিত ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। এক বছর আগে আইনটি প্রণয়ন করা হলেও কার্যকর হবে আজ থেকে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে এতদিন আইনটি বাস্তবায়নে যায়নি সরকার।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সড়ক আইন কার্যকরে এরইমধ্যে দেশের সব ট্রাফিক ইউনিটগুলোতে এবং সার্জেন্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মামলা পস মেশিনে করা হয়। সেই মেশিনটিতে জরিমানার টাকাসহ আরও কিছু বিষয় নির্ধারিত থাকে। সেই বিষয়গুলো এখনও আপডেট করা হয়নি। সেগুলো আপডেট করে তারপর ট্রাফিক পুলিশ নতুন আইনে জরিমানা করবে। এটি না হওয়া পর্যন্ত আগের নিয়মেই সব চলবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি বা নিহতের উত্তরাধিকারীরা আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসার খরচ পাবেন। এ জন্য গঠন করা হবে আলাদা ট্রাস্টি বোর্ড। ট্রাস্টি বোর্ড গাড়ি মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় ও বিভিন্ন অভিযানে জরিমানা বাবদ আদায় করা অর্থ দিয়ে এই তহবিল গঠন করবে।
নতুন আইনে বেপরোয়া বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত বা কারো প্রাণহানি হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে তদন্তে যদি দেখা যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোতে মৃত্যু হয়েছে তবে তা হত্যাকাণ্ড বলে বিবেচিত হবে। আর এতে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ওই চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে প্রাণদণ্ড। এটা তদন্তসাপেক্ষ এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্ধারণ করবে। এ মামলাটি অজামিনযোগ্য ধারার। আগের আইনে মামলার ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদণ্ড ছিল ও তা ছিল জামিনযোগ্য। অতিরিক্ত ওজন বহন করে গাড়ি চালালে চালকের এক বছরের জেল বা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠন করা হবে ‘আর্থিক সহায়তা তহবিল’। কর্তৃপক্ষ বিধি দ্বারা নির্ধারিত হারে ও পদ্ধতিতে গাড়ির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গাড়ির শ্রেণি অনুসারে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা আদায় করবে। এই চাঁদা দিয়েই তহবিল সংগ্রহ হবে এবং এ চাঁদা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর্থিক সহায়তা তহবিল ও ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ডে সরকার অনুমোদিত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে।
আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়। গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পাস না করলে লাইসেন্স পাবেন না চালকরা। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আইনে সাধারণ চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। ফিটনেস চলে যাওয়ার পরেও মোটরযান ব্যবহার করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে জরিমানা ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সেটা কমিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে জরিমানার পরিমান ধার্য করেছে। যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান ও গণপরিবহন চালালে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এমন অপরাধে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবার ৫ হাজার টাকা ও পরেরবার একই অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ করে ট্রাফিক সার্জেন্টদের চিঠি দিয়েছে। একইভাবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটরযান চালালে আইনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএমপি প্রথমবার ১০ হাজার ও দ্বিতীয় দফায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে তিন মাস কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হলেও ডিএমপি সেটা কমিয়ে প্রথমবার এক হাজার ও পরেরবার দুই হাজার টাকা জরিমানার কথা বলেছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা