পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে পাতাল রেল। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম।
ঢাকার তলদেশ ও ভূমির বৈশিষ্ট্য পাতাল রেল (আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়ে) নির্মাণের উপযোগী, যা জাপানের ওসাকা শহরের অনুরূপ। এ কারণে ওসাকা শহরের মতোই রাজধানীতে মাটির ২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ঢাকার যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট ) লাইন-১ নির্মাণ করা হবে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপথে এমআরটি-৬ নির্মিত হচ্ছে। এই দুটি মেট্রোরেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ঢাকায় পাতাল রেলের পূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। ফলে ৯০ কিলোমিটারের পরিবর্তে ২৩৮ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, এখন পাতাল রেল নির্মাণ সমীক্ষার কাজের পরিধি বেড়ে ২৩৮ কিলোমিটার হচ্ছে। ফলে পৃথিবির উন্নত শহরের মতো ঢাকা শহরে জালের মতো বিস্তার হবে পাতাল রেল। নতুন পাতালরেল রুটের নকশা করা হচ্ছে।
নতুন সমীক্ষা রুটের নকশার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
টঙ্গী জংশন হয়ে গুলশান-মালিবাগ-সদরঘাটে একটি পাতালরেল রুট নির্মাণ করা হবে। এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমিক ২৯ কিলোমিটার, মোট স্টেশন থাকবে ২৪টি। গাবতলী-মিরপুর-কুড়িল হয়ে পূর্বাচলে ১৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মাণ হবে। এই রুটে ১৫টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মহাখালী হয়ে কায়েতপাড়া রুটে ১৬ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রুটের পাতালরেল নির্মিত হবে। এই রুটে থাকবে ১৫টি স্টেশন। হাজারীবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন নির্মিত হবে।
কামরাঙ্গিরচর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মালিবাগা রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৪ কিলোমিটার, স্টেশন থাকবে ১৩টি। গাবতলী-হাজারীবাগ থেকে শ্মশানঘাট রোড পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১৩টি স্টেশন থাকবে। গাবতলী-বাড্ডা হয়ে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটারের একটি পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-গুলশান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি পাতালরেল নির্মাণ করা হবে, এই বিশাল রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-মালিবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৪টি স্টেশন থাকবে।
টঙ্গী জংশন-গুলশান-গুলিস্তান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মিত হবে। কেরানীগঞ্জ-সায়দাবাদ হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে থাকবে ১৮টি স্টেশন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-মাতুয়াইল-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১০ কিলোমিটার একটি পাতাল রেল রুট যাবে। এই রুটে থাকবে ৯টি পাতাল রেল স্টেশন। আরও কিছু রুট নির্দিষ্ট করতে নকশা করা হচ্ছে। জে ও টি নামে দুটি রুট ঠিক করা হয়েছে। তবে এই রুটের এলাকা এখনো ঠিক করা হয়নি।
প্রথমে ঢাকার পাতাল রেল (সাবওয়ে) পথ নির্মাণের লক্ষ্যে চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন চারটি রুটের পরিবর্তে ঢাকার মাটির নীচের একাধিক পাতাল রেল রুট নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার।
২২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সমীক্ষা পরিচালনা করার কথা থাকলেও ব্যয় বেড়ে ৩২২ কোটি টাকা হচ্ছে। ১৮ মাসের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে এ সমীক্ষা ২০২০ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন সমীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেলের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ও ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনার নকশা পরিবর্তনও করা হয়েছে। প্রাথমিক নকশা, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা ও আর্থিক বিশ্লেষণ করা হবে। এর পরেই বিশাল ব্যয়ের মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, যা বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা