দেশের প্রথম ৬ লেনের কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়

অনলাইন ডেস্ক

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরেকটি স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’র পর এবার মধুমতি নদীর ওপর ‘কালনা সেতু’র দ্বারও উন্মোচন হতে চলেছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু। এটি চালু হলে বেনাপোল থেকে নড়াইল হয়ে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৭১ কিলোমিটার।

জানা গেছে, সেতুর মূল কাজ শেষ। এখন লাইটিংসহ ছোটখাটো কিছু কাজ চলছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। সেই অপেক্ষায় আছেন সেতু কর্তৃপক্ষসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে।

এদিকে কালনা সেতু চালু না হওয়ায় নড়াইল, যশোর, নোয়াপাড়া শিল্পনগর, যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা

স্থলবন্দরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার লোকজন পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফলও পাচ্ছেন না। কারণ কালনাঘাটে এসে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সব ধরনের যানবাহনকে। তাই এ অঞ্চলের সবাই তাকিয়ে আছেন কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

সেতু কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা জানান, এ পারে নড়াইলের কালনাঘাট, ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝখানে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু।

কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল হয়ে কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ (বিশেষ করে কলকাতা), আসাম ও ত্রিপুরাসহ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর এবং নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ঘোষিত ইকোনমিক জোন চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

এদিকে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরনের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’র সুফল পাচ্ছেন না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনসাধারণের একটি অংশ। বর্তমানে ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেন সড়ক চালু আছে। এ অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন আছে বলে জানিয়েছেন কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে দ্রুত কার্যাদেশ দেওয়া হবে। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।

যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, মাগুরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে। খুব সহজেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে। আমরা কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিকদার আবদুল হান্নান রুনু বলেন, কালনা সেতু হওয়ায় সড়কপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে কালনা সেতু।

fblsk